সাজিদ সাহেবের গত কোরবানি ঈদের অভিজ্ঞতা খুব একটা ভালো ছিলো না। ঈদের আগের দিন তাদের গরুটি প্রায় অসুস্থ হয়ে যায় এবং দুর্বল হয়ে পরে। এমনকি শেষমেশ মাংসের পরিমাণও কম হয়। সবার মন বেশ খারাপ হয়ে যায়। তাই এইবার কোরবানি ঈদের আগেই সাজিদ সাহেব পশু কেনার ব্যাপারে ভালোমতো সব জেনে তবেই কোরবানির পশু কিনবেন বলে ঠিক করেছেন।
আমাদের মনে রাখা উচিত কোরবানি মানে যে শুধু একটি পশু জবাই, তা কিন্তু নয়। এই পশুর উপর শুধু নিজেদের হকই নয় আছে গরীবদের হকও। তাই কোরবানির পশু টি সুস্থ এবং ভালো হওয়া কোরবানি কবুলের সাথে সাথে গরীবদের হক আদায় এবং নিজেদের জন্যেও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেশে কোরবানির সময় হাটগুলোতে দেশীয় পশুর পাশাপাশি বাইরের অনেক পশু থাকে। বিদেশ থেকে আসা পশুর সাথে অনেক সময় অনেক সংক্রামক রোগ চলে আসতে পারে। পাশাপাশি অনেক দূর থেকে আসে বলে পশুগুলো অনেক ক্লান্ত থাকে তাই কোরবানির পশু অসুস্থ কিনা তা সঠিক ভাবে বোঝা যায় না। তাই ভালো পশু নির্বাচনে আমাদের কিছু ব্যাপার মাথায় রাখা খুব প্রয়োজন। নিচে এমনই কিছু ব্যাপার তুলে ধরা হলো।
সুস্থ ও সবল পশুর বৈশিষ্ট্যঃ
- পশু সাধারণত চঞ্চল হবে
- জাবর কাটবে
- নাকের উপর ভেজা ভাব থাকবে
- চামড়া টাইট থাকবে
- সুস্থ পশুর পিঠের কুঁজ মোটা ও টান টান হয়।
- পশু পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রতি খুব সংবেদনশীল এবং সজাগ থাকবে। চোখ উজ্জ্বল দেখাবে।
- পশু সব সময় কান ও লেজ নাড়াচাড়া করবে।
- নাকের মধ্যখানের কালো জায়গাটি (মাজল) ভেজা থাকবে।
- পায়খানা-প্রস্রাব স্বাভাবিক থাকবে ও নিয়মিত করবে।
কোরবানির পশু কেনার সময় যে বিষয় গুলি মাথায় রাখা উচিতঃ
১। ২ বছরের কম বয়সের গরু বা মহিষ এবং ৬ মাসের কম বয়সের ছাগল বা ভেড়া কোনভাবেই কোরবানির জন্য উপযুক্ত নয়। দাঁত দেখে প্রাপ্ত বয়স্ক গরু বাছাই করা উচিত।
২। শিং ভাঙ্গা আছে কিনা, লেজ, মুখ, দাঁত, খুর এসব কিছুই ভালোমতো পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
৩। পশু কেনার আগে এর শরীরের কোথাও ক্ষত চিহ্ন আছে কিনা তা ভালোভাবে দেখে নেওয়া উচিত।
৪। কোরবানির জন্য গাভী না কেনাই ভালো। কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে গাভীটি গর্ভবতী কিনা। গর্ভবতী গরু কিন্তু কোরবানি দেওয়া যায় না।
৫। স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো বা ইনজেকশন দেওয়া গরু হবে খুব শান্ত। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারবে না। পশুর উরুতে অনেক মাংস মনে হবে।
৬। গরুর মুখের সামনে খাবার ধরলে যদি নিজ থেকে জিব দিয়ে খাবার টেনে নিয়ে খেতে থাকে তবে বোঝা যাবে গরুটি সুস্থ। যদি অসুস্থ হয়, তবে সে খাবার খেতে চায় না।
৭। ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস দেখতে হবে। ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, মনে হয় যেন হাঁপাচ্ছে আর প্রচণ্ড ক্লান্ত দেখায়।
৮।পশু দুর্বল হয়ে গেলে ঢুলতে থাকা এবং হাঁটাচলা করতে অস্বীকার করা। মুখে ক্ষত থাকলে, খাদ্যের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকলে মুখ দিয়ে লালা পড়ে, মাথা নিচের দিকে রেখে ঝিমায় এবং কান নিচের দিকে ঝুলে থাকে।
৯। হাটের যে চকচকে চামড়ার গরু আপনার নজর কাড়ছে সেই গরুই ট্যাবলেট প্রয়োগ করা গরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মানুষের শরীরের কোন অংশ ফুলে গেলে বা পানি জমলে সেই অংশের ত্বক যেমন চকচক করে, ট্যাবলেট খাইয়ে মোটা করা গরুগুলোও তেমনি চকচকে হয়।
১০। অতিরিক্ত হরমোনের কারণে পুরো শরীরে পানি জমে মোটা দেখাবে। আঙ্গুল দিয়ে গরুর শরীরে চাপ দিলে সেখানে দেবে গিয়ে গর্ত হয়ে থাকবে।
১১। গরুর পা ও মুখ ফোলা, শরীর থলথল করবে, অধিকাংশ সময় গরু ঝিমাবে, সহজে নড়াচড়া করবে না। এসব গরু অসুস্থতার কারণে সবসময় নীরব থাকে। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। খাবারও খেতে চায় না। এইসব পশু কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১২। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মোটা গরু না কেনায় ভালো কারণ অধিক চর্বি যুক্ত মাংস খাওয়া ঠিক না ওপর দিকে স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো বা ইনজেকশন দেওয়া গরুগুলো অধিক মোটা হয়ে থাকে।
১৩। চেষ্টা করা উচিত দেশি পশু কেনার। কারণ বিদেশ থেকে আসা পশুর সাথে অনেক সময় অনেক সংক্রামক রোগ চলে আসতে পারে। পাশাপাশি অনেক দূর থেকে আসে বলে পশুগুলো অনেক ক্লান্ত থাকে তাই পশুটি অসুস্থ কিনা তা সঠিক ভাবে বোঝা যায় না।
১৪। দিনের আলো থাকতে থাকতেই গরু কিনে ফেলা উচিত, কারণ রাতের বেলায় অনেক সময় রোগাক্রান্ত গরু দেখে বুঝতে অসুবিধা হতে পারে।
পরিশেষে কোরবানির পশু কেনার সময় অবশ্যই এই ব্যাপারে অভিজ্ঞ কাউকে নিয়ে যাওয়া উচিত। আর আমাদের একটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে মোটা পশু মানেই কিন্তু সুস্থ পশু নয়। মোটা পশুতে চর্বি অনেক বেশি হয়, যা খাওয়ার পর মানুষের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায় এবং বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করেও মোটাতাজা করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কোরবানির পশু কেনার সময় আমরা বেশ ভালো অংকের টাকা সাথে বহন করি। এই বিষয়ে অবশ্যই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। অন্যথায় ঈদের আনন্দ হয়ত শেষ মুহূর্তে শেষ হয়ে যেতে পারে।
আমাদের মনে রাখতে হবে কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রিয় বস্তুর ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এই ত্যাগের সাথে যেমন আমাদের নিজের ঈদ আনন্দ জড়িত, তেমনি জড়িত কিছু দরিদ্র মানুষের আনন্দও। তাই আমাদের কোরবানির পশুটি হওয়া উচিত সুস্থ সবল। এর জন্য আমাদের পশু কেনার আগে উপরের বিষয়গুলি অবশ্যই মাথায় রাখা প্রয়োজন।
সবশেষে আমাদের যাদের কোরবানির সামর্থ্য আছে বা কোরবানি দিচ্ছি আমাদের আশে পাশে অনেকেই আছে যারা কোরবানি দিতে পারছে না। সবার সাথে ভাগাভাগি করেই হোক আমাদের এই ঈদ আনন্দ। তবেই ঈদের আনন্দ গাঢ় হবে প্রকৃত ত্যাগের সাথে।
সবাইকে Khaasfood পরিবারের পক্ষ থেকে জানাই মহান ঈদের প্রানঢালা শুভেচ্ছা।