হেলথ টিপস

খাঁটি এবং প্রাকৃতিক মধু চেনা নিয়ে মধুর বিড়ম্বনা (পর্বঃ ১)

আসছে শীতকাল। এই শীতে আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ হবে খাঁটি ও প্রাকৃতিক মধু। কিন্তু, ভালো মানের খাঁটি মধু পাবেন কোথায় ? খাঁটি মধু বুঝবেন কীভাবে! খাঁটি মধু চেনার উপায় পর্ব ১ পড়তে থাকুন, অনেক কিছু জানতে পারবেন ইনশাআল্লাহ্।

খাঁটি মধু বলতে আমরা কি বুঝি?

মধু আমাদের প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে অনন্য একটা স্থান ধরে রেখেছে, আলহামদুলিল্লাহ্! কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক অজ্ঞতা, প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা কুসংস্কার, এবং অবৈজ্ঞানিক পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে কেউ কেউ আমাদের মধুর মানের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে আসছিলেন। আর তাই আমাদের এই সবিস্তর বিশ্লেষণ; প্রেক্ষাপটঃ খাটি মধু।

খাঁটি মধুর নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য  আছে, যেগুলো জানা থাকা জরুরি। যেমনঃ

১. মধুর উপরের স্তরে হালকা ফেনা হওয়া,
২. গ্যাস হওয়া,
৩. গাদ জমা,
৪. তলানীতে চিনিরমত পদার্থ জমা (যা মুলত সুক্রোজ ও গ্লুকোজ),
৫. মধু পাতলাও হতে পারে, যেমন বরই ফুলের মধুতে ময়েশ্চারের পরিমাণ বেশি থাকে এজন্য পাতলা হয় এবং প্রচুর গ্যাস হয়।

সমাজে প্রচলিত আসল মধু চেনার বিভিন্ন পরীক্ষার রকমফেরঃ

সবচেয়ে সহজে মানুষ যেটা করতে চায় তা হলো ইউটিউব দেখে মধু পরীক্ষার চেষ্টা করা। ইউটিউবে আসল মধু চেনা বা পরীক্ষা করার উপায়ের বিভিন্ন ভিডিও দেখে মধু টেস্ট শুরু করে দেয় মধুর ক্রেতারা। এভাবে আসলে অনেক খাঁটি মানের মধুকে ভেজাল প্রমাণ করে অনেক সময়।

মধু কখনই জমে না, যদি জমে তাহলে তা ভেজাল; মধুতে পিপড়া লাগেনা, লাগলে তা ভেজাল; মধুর ফোঁটা হাতের বৃদ্ধাংগুলির নখের উপর রেখে পরীক্ষা করে, পড়ে গেলে তা খাঁটি নয়; আবার পানিতে মিশিয়ে পরীক্ষা করে, খাটি হলে গলে যাবে না বা পানির সাথে কোনোভাবেই মিশবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেক সময় অনেকেই বলেন যে, মৌ চাষীরা মৌমাছিকে চিনি খাইয়ে মধু তৈরি করে থাকে।

অনেকেই মধুর নানা ধরণের পরীক্ষার কথা বলেন, যা আসলে মধুর ধরণভেদে ভিন্ন-ভিন্ন ফলাফল প্রদান করে থাকে। এক্ষেত্রে জেনে রাখা উচিৎ – এসব প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতি আদৌ সঠিক নয়, বিজ্ঞানসম্মতও নয়।

খাঁটি মধু চেনার উপায় নিয়ে প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিগুলো সঠিক নয়ঃ

• অনেকের ধারণা খাঁটি মধু কখনোই জমাট বাধে না। কিন্তু তা সঠিক নয়। মধুর প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে আছে সুক্রোজ এবং গ্লুকোজ। গ্লুকোজ সুযোগ পেলে জমাট বাধবেই। একে বলে ক্রিসটালাইজেশন। বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন ফুলের মধু জমাট বাধতে দেরী হতে পারে। যেমন – আসল সুন্দরবনের মধুতে পানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় এটা জমাট বাধে না। কিন্তু যে মধুতে পানির পরিমান কম থাকে, তা সময়ের সাথে সাথে ক্রিস্টালাইজড হতে শুরু করে। বিভিন্ন ফুলের মধুর গ্রেড কম বেশির কারণে বা ময়েশ্চারের কম বেশির কারণে জমাট বাধতে সময় নেয়।

• আবার, মধুর ঘনত্ব-ভিত্তিক টেস্টের বিষয়টি ভিত্তিহীন। কারণ, মধু পাতলাও হতে পারে। যেমন – বরই ফুলের মধুতে ময়েশ্চারের পরিমাণ বেশি থাকে, এজন্য তা পাতলা হয় এবং প্রচুর গ্যাস হয়। সিজনাল কারণে ময়েসচারের তারতম্য থাকলে মধুর ঘনত্ব পরিবর্তন খুবই স্বাভাবিক। একারণে পানিতে ঢেলে পরীক্ষা, আঙ্গুলের নখে নিয়ে পরীক্ষা, টিস্যু বা নিউজপ্রিন্ট কাগজে নিয়ে পরীক্ষা করার ফলাফল মোটেও সঠিক ফলাফল দিতে সক্ষম নয়।

• মধুতে আগুন ধরলে আসল মধু, ধারণাটি সম্পূর্ণ অমূলক। মধুর সাথে মোম মিশিয়ে যদি তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় তবে মধুতে খুব সহজেই আগুন জ্বলবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই মোমটা যদি মধুতে না মিশিয়ে চিনির শিরাতে মিশিয়ে দেই, তাহলেও একই ফল পাবেন। বিশ্বাস না হলে নিজেই পরীক্ষা করে দেখুন।

আশা করি খাঁটি মধু চেনার উপায় সম্পর্কে আপনাদের ভালো ধারণা দিতে পেরেছি।

খাসফুড অনলাইন শপ থেকে অর্ডার করুনঃ

আরও পড়ুনঃ

খাঁটি এবং প্রাকৃতিক মধু চেনা নিয়ে মধুর বিড়ম্বনা (পর্বঃ ২)

Leave a Reply