ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর জানতে পারলেন, আপনার দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা-সীমা অতিক্রম করেছে। তাই, ভয়ে আপনার শরীর থেকে ঘাম ঝরতে লাগল। কিন্তু, আর নয় কোলেস্টেরলের ভয়। কোলেস্টেরল থেকে বাঁচার উপায় রয়েছে।
তা কিভাবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক-
যদি প্রশ্ন করেন, কী? বলি, মোমসদৃশ বস্তু। এটি তৈরি হয় দেহের ভেতরেই যেমন লিভারে বা যকৃতে। আমাদের দেহে রক্তে বিদ্যমান কোলেস্টেরলের ৭৫% ভাগই তৈরি হয় যকৃতে। বাকি ২৫% আসে খাদ্য থেকে।
বলতে পারেন- কী কাজ করে থাকে এই কোলেস্টেরল? এটি শরীরের নার্ভ প্রতিরক্ষা, কোষ এবং হরমোন তৈরী করে। কোলেস্টেরলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা- ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এলডিএল)- এটি অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে অবরুদ্ধ করে রক্তনালীর পথ। এবং আরেকটি ভালো কোলেস্টেরল (হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এইচডিএল) যা ক্ষতিকর কোলোস্টেরল অপসারণে সহায়তা করে। ফলে ধমনীর দেয়ালে এটি জমা হবার সুযোগ পায় না।
কোলেস্টেরল নিয়ে কেন এত ভয়? স্বাভাবিক মান বজায় থাকলে কোলেস্টেরল দেহের জন্য সব উপকারী জিনিস করতে থাকে। যদিও রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ হয়না। তবে রক্তে উচুমান কোলেস্টেরল থাকলে ধমনীগ্রাত্রে চর্বি জমে এবং অবরুদ্ধ হয় রক্ত প্রবাহ। বিশেষ করে করোনারি ধমনী দিয়ে রক্ত চলাচল ক্ষীণ হয়ে যায়। ফলে করোনারি হৃদরোগ হয়। এছাড়া স্ট্রোক এবং আলঝাইমার রোগেরও ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
কোলেস্টেরল থেকে বাঁচার উপায়
যদি সঠিক সময়ে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো না যায় তাহলে তা নানা ভাবে প্রাণঘাতী প্রমাণিত হতে পারে। ফলে এর থেকে সাবধানে থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কোলেস্টেরলের মান কমাতে খাদ্যবিধি একটি উত্তম পন্থা। রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে যখন ডাক্তারের কাছে এত ছুটাছুটি তখন কিছু কিছু কোম্পানি কোলেস্টেরল ফ্রি ফুডের চটকদার প্রচারণা চালিয়ে ক্রেতা-ভোক্তাদের সাথে প্রতারণা করে থাকেন। এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে, কোলেস্টেরল ফ্রি কোন ফুড নেই। তবে কয়েক ধরনের খাবার গ্রহন করে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। বিশেষ করে ফাইবার যুক্ত যেকোনও খাবার কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণ করে হার্টকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া-
সবুজ চা
বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সবুজ চা (গ্রিন টি) এর ভেতরে রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমানোর উপাদান রয়েছে। দিনে মাত্র পাঁচ কাপ সবুজ চা পান করলে ২৫ শতাংশ কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ কমে যেতে পারে। এতে রক্ত পরিস্কার হয়, দূর হয় রক্তের জমাট বাঁধা। এছারাও হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষা দেয় সবুজ চা। সবুজ চায়ে থাকে পর্যাপ্ত ফলিক অ্যাসিড। ফলিক অ্যাসিড হার্টের সমস্যা ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। আর দেরী না করে সবুজ চা সেবন করুন এবং হৃৎপিন্ড রক্ষা করুন।
মাছ
মাছ এবং মাছের তেল কোলেস্টেরল কমাতে পারে। এর ভেতরে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। এটি খুব সহজে রক্ত থেকে কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর চর্বি কমিয়ে দেয়। প্রত্যেকেরই সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার মাছ খাওয়া উচিত। অধিকাংশ মাছেই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে।
মধু
মিষ্টি হিসাবে চিনির চেয়ে মধু খাওয়া সবসময় উপকারী। কারণ মধুতে থাকে এমন কিছু উপাদান যা কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কমিয়ে দেয়, যা চিনি খেলে বেড়ে যায়।
বাদাম
প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম আপনার রক্তে ক্ষতিকর চর্বি বা কম ঘনত্বের লিপিডের (এলডিএল) মাত্রা ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া বাদাম খেলে পাবেন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
ওটমিল
সকালের নাশতায় ভুট্টা বা যবের তৈরি ওটমিল বা কর্নফ্লেক্স হতে পারে একটি আদর্শ খাবার। এতে করে দিনের শুরুতেই ১ থেকে ২ গ্রাম আঁশ খাওয়া হয়ে যাবে, যা অন্ত্রে কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেবে।
সয়াবিন
শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে সয়াবিন। বৃদ্ধি করে ভালো কোলেস্টেরল। মানুষের ধমনীতে কোলেস্টেরলের যে জারন হয় তাতে বাধা দেয় সয়াবিন।
বার্লি
এটা প্রমানিত যে, বার্লি কোলেস্টেরলের মাত্রা ১৫ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে। এতে আছে বিটা গ্লকন যা এক প্রকার দ্রবণীয় ফাইবার। এটি কোলেস্টেরল ও অন্ত্রের চর্বি দূর করে। শরীর থেকে মেদ অপসারণ করে দূর করে কোলেস্টেরল।
সবজি, ফলমূল
সবুজ পাতা ও ডাঁটাসুদ্ধ সবজি, যেমন বিভিন্ন ধরনের শাক এবং খোসাসহ ফলমূলে (যেমন: পেয়ারা, আপেল) রয়েছে অন্ত্রের চর্বি শোষণ কমানোর উপাদান। প্রতিদিন এ ধরনের খাবার আপনার রক্তে এলডিএলের মাত্রা ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে বলে জানা গেছে।
প্রশ্ন করি, জীবনকে ভাল বাসেন? সবাই বলবেন, হ্যাঁ।
তাহলে বলি, কোলেস্টেরল থেকে বাঁচার উপায় জানুন। কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার পরিহার করুণ এবং ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম করলে প্রথম দুই মাসের মধ্যেই হিতকর কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে ৫%। নিয়মিত ব্যায়ামে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলও কমে। এছাড়া অ্যান্টি অক্সিডেন্ট (ভিটামিন অ, ঊ ও ঈ) নানাভাবে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়, সাথে হৃদরোগের ঝুঁকিও।
কোলেস্টেরল থেকে বাঁচার উপায় তো জানলেন। এবার ভাবুন খাবারের আগে কোন কোন খাবারের দিকে নজর দিবেন? নিশ্চয়, সবুজ চা, মাছ, মধু ইত্যাদি? আর ভালো মানের এই খাবার গুলো কোথায় পাবেন? কোথাও যেতে হবে না। ভিজিট করুন খাস ফুড এ অনলাইন পেইজে।