অপরাহ্নের চায়ের আড্ডায় কলেজ জীবনের স্মৃতি আর বর্তমান জীবন সংসারের আলাপচারিতায় মুখোর; তাহমিদা আফরিনের ধানমন্ডি ১১ নাম্বারের বসার ঘর। তাহমিদা আফরিন পেশায় একজন শিক্ষক। দেশের একটি নামকরা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর তিনি।
ছুটি তেমন পান না। তাই দেখে শুনে একটা ছুটির দিনে সময় বের করে কলেজ জীবনের বন্ধুদের কয়েকজনকে দাওয়াত করলেন নিজের বাসায়। চায়ের কাপের টুং টাং শব্দ আর সবার মন খোলা হাসিতে মুখর হয়ে উঠলো তার বসার ঘর। বান্ধবী রিতা গ্রিন টি নিয়ে আসছে বাসা থেকে। তার স্বামী একটি চা কোম্পানীর ব্র্যান্ড ম্যানেজার।
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস মিলি বান্ধবীদের বলে উঠলেন – “তোদের মনে আছে, কলেজে থাকতে আমাদের সেই দিনগুলোর কথা?”
আয়শা বললেন- “থাকবে না আবার! ওগুলোই ছিল জীবন; বুঝলি! এখন সংসার ছেলে মেয়ে সামলে চল্লিশ বছরেই সত্তর বছরের বুড়ি লাগে! চুল দেখেছিস? অর্ধেকই পাকা!”
পাশ থেকে সুরমা আক্তার বলে উঠলেন- “এত বাড়িয়ে বলিস না। মোটেই তোকে সত্তর বছরের বুড়ি লাগে না। আমার তো মাথায় টাক পরে গেছে রীতিমতো! আমাকে কি বলবি? “
চায়ের কাপটা টি-টেবিলের উপর রাখতে রাখতে মিলি বললেন- “আরে শোন, বয়স হচ্ছে তো! এখন তো সবকিছু ওইভাবে মেইনটেইন করা সম্ভব ও না।“
এমন সময় আয়শা বললেন- “এটা কিভাবে বলছিস তোরা? আফরিনের চুল দেখেছিস? ওতো অর্থনীতির ছাত্রী ছিল। রেজাল্ট ও ছিল ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট ! এখন আবার কিনা অর্থনীতির প্রফেসর! এত কিছু কিভাবে মেইনটেইন করে ও ? এই আফরিন, তুই কি ছোটবেলা থেকেই নামী দামী ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট ব্যবহার করতি? চল্লিশ পার করেছিস বয়স অথচ চুল কি এখনো! মাশ-আল্লাহ !”
তাহমিদা আফরিন শান্ত ভঙ্গিতে একটা হাসি দিয়ে বললেন – “ আমি তেমন কিছুই করতাম না রে! আমার দাদী- নানী এমনকি মা ও নিয়ম করে তেলটা মালিশ করে দিতেন ছোটবেলা থেকে! আল-হামদুলিল্লাহ, এরপর আমারও অভ্যেস হয়ে গেল। সপ্তাহে নিয়ম করে তেল আর শ্যাম্পু ছাড়া আমি আর কিছুই করি না। সময় কই এত! আর ওসব কোনটাই বিদেশী প্রোডাক্ট না। আমার দিদা গ্রাম থেকে পাঠিয়ে দিত তেল। সেগুলোই ব্যবহার করতাম। বিদেশী জিনিসের প্রতি আসক্ত হতে হতে আমরা কিসে কার্যকারিতা কিসে ক্ষতি তাই ভুলে গেছি।“
অর্থনীতির প্রফেসর তাহমিদা আফরিনের মতে, এত বছর ধরে এত সুন্দর ঘন কালো চুলের যত্নে যদি তেলই থাকে তাহলে আসুন জেনে নেই তেল চুলের যত্নে কতটা উপকারী।
চুলের যত্নে তেল
বহু প্রাচীন কাল থেকেই চুলের যত্নে তেল ব্যবহার আমাদের অজানা নয়। ভারতীয় উপমহাদেশের মেয়েরাও চুলের যত্নে তেল ব্যবহার করতো। চুলের জন্য নারিকেল তেল, যয়তুন তেল, নিমের তেল, কালোজিরা তেল এমনকি সরিষার তেলও ব্যবহার করা যায়।
যেহেতু আমরা কেবল নারিকেল তেলকেই চুলের যত্নে বেশি প্রাধান্য দেই, তাই আসুন প্রথমে জেনে নেই এই নারিকেল তেল আমরা কেন ব্যবহার করবো-
কারণ,
১. এতে আছে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান, ভিটামিন ই ও কে, মিনারেলস এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ। এছাড়াও রয়েছে প্রোটিন, ফ্যাটি এসিড ,জিংক, পটাশিয়াম। ঘনকালো চুলের যত্নে তেল
২. অন্যান্য তেলের তুলনায় নারিকেল তেলে পানির পরিমান বেশি থাকায় এটি সহজেই মাথার স্কিনে মিশে যায়।
৩. এই তেল ম্যাসাজ করলে মাথার ব্লাড সার্কুলেশন স্বাভাবিক থাকে।
৪. নারিকেল তেলের পুষ্টি ও চর্বি অনুপাত রয়েছে। যার কারণে এটি ব্যবহারের বৈজ্ঞানিক সুবিধা পরিলক্ষিত হয়।
নারিকেল তেলের ৯৯% ফ্যাট যার প্রধান অংশই সম্পৃক্ত চর্বি।
প্রতি ১০০ গ্রাম নারিকেল তেলে থাকে যা থাকে –
১. ক্যালোরি | ৮৯০ কিলোক্যালোরি। |
২. স্যাচুরেটেড ফ্যাট | ৮২.৫ গ্রাম |
৩. মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট | ৬.৩ গ্রাম |
৪. পলস্যাচুরেটেড ফ্যাট | ১.৭ গ্রাম |
৫. ভিটামিন ই | ০.১১ মিলিগ্রাম |
৬. ভিটামিন কে | ০.৬ মাইক্রোগ্রাম |
৭. আয়রন | ০.০৫ মিলিগ্রাম |
৮.অন্যান্য উপাদান | ৮৬ মিলিগ্রাম |
সূত্রঃ উকিপিডিয়া
৫. আপনার চুলে যদি খুশকি থাকে তাহলে এই নারিকেল তেল চুলের খুশকি দূর করতে সাহায্য করবে।
৬. সারাদিন অফিস করে আপনার ক্লান্তি দূর করতেও নারিকেল তেলের ব্যবহার অনস্বীকার্য।
৭. চুল পড়া সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ চুলের গোড়া শক্ত করতে এবং চুল পড়া বন্ধ হতে এটি সহায়তা করে।
৮. নিয়মিত ব্যবহারে চুল হয়ে ওঠে ঘন কালো।
৯. তাছাড়া এই তেল হেয়ার কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। যার কারনে চুল হয়ে উঠবে মসৃণ।
১০. বাইরে বের হওয়ার সময় সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মী থেকে আপনার চুলকে রক্ষা করবে নারিকেল তেল।
১১. নারিকেল তেল ব্যবহারে চুল তাড়াতাড়ি বড় হয়। যা ব্যবহার করে আপনি পেতে পারেন লম্বা চুল।
১২. এছাড়া কিছু কিছু ময়লা আছে যা সহজে পরিষ্কার হয় না। কিন্তু মাথার ত্বক ও চুলে নারিকেল তেল দিলে তা সহজে দ্রবীভূত হয়ে আপনার চুলকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
১৩. নারিকেল তেলে আছে লরিক এসিড নামের এক ধরনের ফ্যাটি এসিড, যার দরুণ অন্য যেকোন তেলের চেয়ে এই তেলকে চুল সবচেয়ে দ্রুত শুষে নেয়।
তবে বাজারে ভেজাল নারিকেল তেলের ও অভাব নেই। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে গিয়ে সাধারণ জনগণকে ব্যবহার করা ব্যবসায়ীদের একমাত্র পন্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে । ঘনকালো চুলের যত্নে তেল. নারিকেল তেলে ভেজাল ঢুকে কেমিক্যাল মিশ্রিত করার মাধ্যমে।
ভেজাল তেল চেনার উপায়
১. নারিকেল তেলের সব থেকে বড় গুণ হচ্ছে এটি ঠান্ডা হলে জমে যায়। নারিকেল তেল খাঁটি কিনা তা বোঝার জন্য ৩০ মিনিট ফ্রিজে জমতে দিন। তেল যদি পুরোপুরি জমে গিয়ে থাকে, তাহলে বুঝবেন আপনার তেল একদম খাঁটি।
২. খাঁটি নারকেল তেল একদম পানির কালার হয়ে থাকে। ভেজালযুক্ত নারিকেল তেল বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে।
ভেজাল মুক্ত নারিকেল তেল পেতে আপনি তাই ঘরে বসে তৈরি করে নিতে পারেন নারিকেল তেল। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে যদি আপনার হাতে সময় না থাকে তাহলে নিজের চুলের যত্নে অবশ্যই এমন কারো কাছ থেকে তেল সংগ্রহ করুন যারা বিশ্বস্ত এবং তেল তৈরিতে কোন রকম ভেজাল মিশ্রণ করেনা।
নানা ধরণের রসা, ভুনাসহ বিভিন্ন তরিতরকারি রান্নায়, পিঠা, মিষ্টিসহ নানা মিষ্টান্ন তৈরিতে এই তেল ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি মাথা ঠান্ডা রাখতে, চুল পড়া কমাতে এ তেল খুব কার্যকরী। সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য কিছুদিন পরপর এ তেল রোদে দিন।
তবে চুলের যত্নে কেবল নারিকেল তেলই উপকারী এই তথ্য একদমই সঠিক নয়। কার্যকারিতা এবং গুণাগুণ ভেদে চুলের জন্য অলিভ অয়েল ও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ! আসুন অলিভ অয়েলের কার্যকারিতা সম্পর্কে এবং কেন অলিভ অয়েল ব্যবহার করবো সেটা জানবো আমরা আগামী পর্বে।