ফ্রোজেন স্ন্যাকস – এই শব্দগুচ্ছের সাথে বর্তমানে প্রায় সকলেই বেশ পরিচিত। কর্মব্যস্ততায় ঘেরা জীবনে দিনে দিনে এই ফ্রোজেন স্ন্যাকসই যেনো হয়ে উঠেছে রান্নাঘরের এক বিশ্বস্ত সঙ্গী। আর কেনই বা হবে না বলুন তো? সারাদিন বাইরে খাটাখাটুনি করে এসে রান্নার ইচ্ছেও যেমন করে না তেমনি শক্তিতেও পড়ে ভাটা। কিন্তু সন্ধ্যায় পরিবারের সাথে নাস্তা করতে করতে আড্ডা দেওয়ার কথা ভাবলে কিংবা মেহমান আসলে আপ্যায়নের চিন্তা মাথায় আসলে খুঁজতে হয় বিকল্প সমাধান। আর তখন ফ্রোজেন স্ন্যাকসই হয়ে ওঠে সবচেয়ে সহজ সমাধান।
কীভাবে এলো ফ্রোজেন খাবার?
বর্তমানে বহুল সমাদৃত ফ্রোজেন খাবারের প্রচলন ঘটেছে সেই ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বে চীনাদের সময় থেকে বলেই ধারনা করা যায়। সেই সময় শীতের মৌসুমে বরফের ছোট ছোট কুঠুরী বানিয়ে তাতে খাবার সংরক্ষণের প্রচলন ছিলো। চীনাদের পাশাপাশি রোমানদের মধ্যেও এই পদ্ধতিতে খাবার সংরক্ষণের প্রচলন ছিলো বলে ধারণা করা হয়। পরবর্তীতে উনবিংশ শতাব্দীতে খাদ্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে হিমায়িতকরণ নিয়ে বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা চালানো হয়। বিংশ শতকের শুরুর দিকে ফ্রোজেন খাবারে এক বিপ্লব আসে। ক্ল্যারেন্স বার্ডসআই নামক এক আমেরিকান উদ্ভাবক মোমের আবরণে বেষ্টিত কার্ডবোর্ডের বক্সের মধ্যে খাবার প্যাকেট করে দ্রুত ঠান্ডা করতে পারে এমন এক মেশিনের মাধ্যমে খাবার হিমায়িত করার এক পদ্ধতি আবিষ্কার করে। এই পদ্ধতিতে হিমায়িত খাবারের স্বাদ ও টেক্সচার বেশ ভালো থাকে। ১৯২০ সালের দিকে জেনারেল সিফুড কর্পোরেশন নামক এক সংস্থা বার্ডসআই এর খাদ্য হিমায়িত করার পদ্ধতিকে বানিজ্যিকিকরণ করে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই পদ্ধতিতে খাবার সংরক্ষণ আরও সমৃদ্ধ হয়।
প্রথম দিকে সবজি, ফল ও মাছকে হিমায়িত করে বাজারজাত করা হলেও বর্তমানে রেডি-টু-কুক ফুড বা পূর্ব থেকে প্রস্তুত ও প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবারের প্রচলন বৃদ্ধি পেয়েছে। বহির্বিশ্বের পাশাপাশি বর্তমানে আমাদের দেশেও নানান ধরনের ফ্রোজেন বা হিমায়িত খাবারের প্রচলন পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঘড়ির কাটার সাথে দৌঁড়োতে থাকা ব্যস্ত জীবনে একটু বৈচিত্র ও স্বাদে বৈচিত্র আনতেই ধীরে ধীরে এই ফ্রোজেন খাবারের প্রসার দেখা দিয়েছে।
ফ্রোজেন স্ন্যাকস এর প্রকারভেদ
অঞ্চলভেদে ফ্রোজেন স্ন্যাকস এর বৈচিত্র দেখা দেয়। কোন অঞ্চলে বসবাসকৃত মানুষের চাহিদা, রুচি, খাদ্যের প্রতি অভ্যস্ততা ইত্যাদি নানান বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই দেখা যায় এতো বৈচিত্র্যতা। এই যেমন আমাদের দেশে ফ্রোজেন স্ন্যাকস হিসেবে সিংগারা, সমুচা, চিকেন রোল, ভেজিটেবল রোল, পরোটা ইত্যাদি অধিক প্রচলিত।
ফ্রোজেন স্ন্যাকস- নিরাপদ নাকি অনিরাপদ?
ফ্রোজেন স্ন্যাকস এর চাহিদা থাকা স্বত্ত্বেও এটি নিরাপদ কি না, তা নিয়ে জনমনে রয়েছে সংশয়। আদতে ফ্রোজেন খাবারগুলোর নিরাপত্তা নির্ভর করছে বেশ কিছু ব্যাপারের উপর। এই যেমন, ফ্রোজেন খাবার প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল এর গুণগত মান কেমন ছিলো, প্রস্তুতির সময় সমস্ত প্রক্রিয়া হাইজিন মেনে করা হয়েছে কি না, প্যাকেটজাত করার সময় নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ ছিলো কি না, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ঠিকভাবে প্রদান করা হচ্ছে কি না এমন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার উঠে আসে যখন এর নিরাপত্তার ব্যাপারে কথা উঠে। প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে মেনে প্রস্তুতকৃত ফ্রোজেন স্ন্যাকসকে নিঃসন্দেহে নিরাপদ হিসেবেই গ্রহণ করা যায়।
ফ্রোজেন স্ন্যাকস এর ব্যাপারে তো ধারণা পাওয়া গেলো, এবার আসি খাস ফুডের ফ্রোজেন স্ন্যাকস এর প্রসঙ্গে। খাস ফুডের যাত্রা শুরু হয় গ্রাহকদেরকে বিশুদ্ধ খাদ্য পণ্য সরবরাহের অঙ্গীকার নিয়ে। নানা ধরণের খাদ্য সামগ্রীর সমারোহে খাস ফুডের সম্ভারে যুক্ত হয় বেশ কিছু ফ্রোজেন স্ন্যাকস। এই যেমন, চিকেন রোল, চিকেন সিংগারা, চিকেন সমুচা, চিকেন অন্থন, চিকেন নাগেট, পরোটা। এই প্রতিটি খাবার প্রস্তুত করা হয় খাস ফুডের বিভিন্ন পণ্যের সংমিশ্রণে। অর্থাৎ, প্রতিটি স্ন্যাকস আইটেমে ব্যবহৃত মসলা থেকে শুরু করে মাংস – সব কিছুই খাস ফুডের বাছাইকৃত পণ্য। এই যেমন মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি স্ন্যাকস আইটেমগুলোতে ব্যবহার করা হয় খাস ন্যাচারাল ব্রয়লার এর মাংস। খাস ন্যচারাল ব্রয়লার নিজস্ব ফার্মে উন্নত ব্যবস্থাপনায় পালন করা হয়। এমনকি এই মুরগিগুলোর ফিড প্রস্তুত করা হয় প্রাকৃতিক খাবারের সমন্বয়ে। এদের রোগমুক্ত রাখতে কোন ধরণের সিন্থেটিক ঔষধ ব্যবহার না করে দেওয়া হয় কালিজিরা, তুলসির মতন ভেষজ উপাদানের মিশ্রণ। একই সাথে এগুলো অ্যান্টিবায়োটিক ও গ্রোথ প্রোমোটার মুক্ত। ফলে বাজারে প্রাপ্ত ব্রয়লার থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা এবং নিরাপদ। তাছাড়া এইসব স্ন্যাকস আইটেমে ব্যবহৃত বিভিন্ন মসলা সংগ্রহ করা হয় দেশ বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। ফলে মসলার গুণগত মানও থাকে অটুট। আর সেরা সব পণ্যের ব্যবহারে তৈরি করা হয় বলে এই খাবারগুলোর স্বাদ ও মান বাজারে প্রাপ্ত অন্যান্য ফ্রোজেন খাবার হতে আলাদা।
খাস ফ্রোজেন স্ন্যাকস আইটেমে ব্যবহৃত উপকরণঃ
খাস ফুডের বিভিন্ন ফ্রোজেন স্ন্যাকসে কোন কোন উপকরণ ব্যবহৃত হয় তা একনজরে দেখে নেওয়া যাক –
চিকেন অন্থনঃ
ময়দা, পানি, লবণ, তেল, খাস ন্যাচারাল ব্রয়লার মুরগির মাংস, খাস ন্যাচারাল ডিম, আলু, পেঁয়াজ, আদা বাটা, রসুন বাটা, চিলি ফ্লেক্স, কাঁচামরিচ, সয়া সস, খাস ফুড স্পেশাল মশলা।
চিকেন সমুচাঃ
ময়দা, পানি, কর্ণফ্লাওয়ার, লবণ, খাস ন্যাচারাল ব্রয়লার মুরগির মাংস, খাস ন্যাচারাল ডিম, আদা বাটা, রসুন বাটা, গরম মশলা, পেঁয়াজ, হলুদ গুড়া, ম্যাজিক মশলা, কাঁচামরিচ, তেল, চিনি (সামান্য), সয়াসস, খাস ফুড স্পেশাল মশলা।
চিকেন নাগেটঃ
খাস ন্যাচারাল ব্রয়লার মুরগির মাংস, খাস ন্যাচারাল ডিম, কর্ণ ফ্লাওয়ার, ব্রেড, ব্রেড ক্রাম, সয়া সস, লবণ, মিক্সড মশলা এবং তেল।
চিকেন সিঙ্গারাঃ
ময়দা, পানি, তেল, লবণ, কালোজিরা, খাস ন্যাচারাল ব্রয়লার মুরগির মাংস, আলু, বাদাম, পেঁয়াজ, আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ গুড়া, মরিচ গুড়া, চাট মশলা, গরম মশলা পাঁচফোড়ন, লবণ, কাঁচা মরিচ, খাস ফুড স্পেশাল মশলা।
চিকেন রোলঃ
ময়দা, তেল, গাজর, পেঁপে, বরবটি, খাস ন্যাচারাল ব্রয়লার মুরগির মাংস, লবণ, মরিচের গুঁড়া, ধনিয়ার গুঁড়া, কাঁচামরিচ, চাট মশলা, ভাজা জিরা গুঁড়া, টমেটো সস, সয়া সস, গোল মরিচ গুঁড়া, খাস ফুড স্পেশাল মশলা।
রান্নার প্রক্রিয়াঃ
১। ডিপ ফ্রিজ থেকে ১০ মিনিট আগে বের করতে হবে।
২। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে মিডিয়াম লো আঁচে ডুবো তেলে ভাজতে হবে।
ফ্রোজেন স্ন্যাকস এর তাপমাত্রা বারবার পরিবর্তন হলে খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ভাজার পূর্বে যে কয়টা ভাজা হবে শুধু সেই কয়টা বের করা ভালো। এতে করে স্বাদ ও মান বজায় থাকে।
বাচ্চাদের টিফিন হোক বা সন্ধ্যার নাস্তা কিংবা অতিথি আপ্যায়ন, বর্তমানে সময় বাঁচাতে এই ফ্রোজেন স্ন্যাকস এর উপরই আমরা অনেকাংশেই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। স্বাদের পাশাপাশি মানসম্মত ফ্রোজেন স্ন্যাকস গ্রহণ নিশ্চিত করাটাও আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যথায় রয়ে যায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি। তাইতো নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য নিয়ে হেলাফেলা না করে মান সম্মত ফ্রোজেন খাবারের প্রতি নির্ভরশীল হওয়াটাই শ্রেয়। আর মান সম্মত খাবার মানেই খাবারের কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রস্তুত প্রক্রিয়া এবং প্যাকেজিং, সকল ধাপই সম্পন্ন হওয়া চাই নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে। আর খাস ফ্রোজেন স্ন্যাকস এই প্রতিটি ধাপেই মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। কেননা গ্রাহকদের বিশুদ্ধ ও নিরাপদ খাবার পৌঁছে দেওয়াই খাস ফুডের লক্ষ্য।