নিউট্রি টক, হেলথ টিপস

বন্ধ্যাত্বঃ এক অদৃশ্য ক্ষত (পর্ব – ১)

Khaas Infertility

একটি পরিবার পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন সেই পরিবারে আগমন ঘটে ফুটফুটে শিশুর। একটি শিশুর জন্ম নিয়ে আগ্রহের শেষ থাকে না বাবা মায়ের। কিন্তু এই খুশিতে বাঁধা দিতে একটি শব্দই যথেষ্ট – বন্ধ্যাত্ব (Infertility)। অনেকে মনে করেন বন্ধ্যাত্ব বিশেষ কোন রোগ, আবার অনেকের ধারনা এটি সৃষ্টীকর্তার পক্ষ হতে এক ধরনের শাস্তি। তবে এই বিষয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানের অভাব অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি করে তোলে জটিল। তাই আমরা এবার জানবো এই বন্ধ্যাত্বের আদ্যোপান্ত। 

 

বন্ধ্যাত্ব (Infertility)

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বন্ধ্যাত্ব হচ্ছে প্রজননতন্ত্রের রোগ যা নারী অথবা পুরুষ উভয়েরই থাকতে পারে এবং এর ফলে দীর্ঘ এক বছর বা তার অধিক সময় চেষ্টার পরেও কোন দম্পতিকে নিঃসন্তান থাকতে হয়। এর পিছনে নানান কারণ বিদ্যমান এবং অনেকক্ষেত্রেই এই সমস্যা সঠিক চিকিৎসা ও জীবন ধারণের পদ্ধতির মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। জার্নাল অব বায়োসায়েন্স এন্ড মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, ওয়ার্ল্ড ইনফার্টিলিটি সার্ভে দ্বারা প্রকাশিত তথ্যমতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ৪ শতাংশ দম্পতি সন্তান জন্মদানে অক্ষম। এই অক্ষমতার পিছনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীদের দায়ী করা হলেও পুরুষদের মধ্যেও বন্ধ্যাত্বজনিত সমস্যা লক্ষ্যণীয়। 

 

বন্ধ্যাত্বের ধরণ 

সাধারণত বন্ধ্যাত্বকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটি হচ্ছে প্রাথমিক বা প্রাইমারি ইনফার্টিলিটি এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে সেকেন্ডারি ইনফার্টিলিটি। 

১। প্রাইমারি ইনফার্টিলিটি – যখন কোন দম্পতি একেবারেই সন্তান গ্রহণে অক্ষম থাকেন তখন সেই অবস্থাকে প্রাইমারি ইনফার্টিলিটি বলে অভিহিত করা হয়। 

২। সেকেন্ডারি ইনফার্টিলিটি – যখন কোন দম্পতি অন্তত একবার সন্তান ধারণ করেন এবং কোন কারণবশত পরবর্তীতে তাদের সন্তান গ্রহণে অক্ষমতা দেখা দেয় তখন সেই অবস্থাকে সেকন্ডারি ইনফার্টিলিটি বলে অভিহিত করা হয়। 

 

কেনো এই অক্ষমতা? 

বন্ধ্যাত্বের পিছনে বেশ অনেকগুলো কারণ দায়ী। এগুলো যে শুধুমাত্র শারীরিক কারণ তা কিন্তু নয়। বরং পারিপার্শ্বিক কারণগুলোও সমান দায়ী। আবার আমাদের সামাজিক মনোভাব এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে বরাবরই বন্ধ্যাত্বের অভিযোগে নারীকে অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু সন্তান না হওয়ার পিছনে পুরুষও হতে পারেন সমান দায়ী। অর্থাৎ, বন্ধ্যাত্বের শিকার হতে পারেন পুরুষও নিজেও। সেসব নিয়ে বিস্তারিত আলাপে যাওয়ার আগে জেনে নেওয়া যাক আমাদের জীবনধারা কি করে বন্ধ্যাত্বের মতন নিদারুণ সমস্যাকে উষ্কে দিচ্ছে – 

 

১. খাদ্যাভ্যাস: প্রথমেই যে ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করা উচিৎ তা হচ্ছে ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাস। ভেজাল বা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থমিশ্রিত অনিরাপদ খাদ্য প্রজনন ক্ষমতার সাথে নিবিড় ভাবে জড়িত। কেননা খাদ্যে মিশ্রিত এসকল রাসায়নিক পদার্থ দীর্ঘদিন গ্রহণের ফলে শুক্রাণু ও ডিম্বানুর গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। এছাড়া প্রতিদিনের খাবারে ভিটামিন বা মিনারেলের অভাবে অপুষ্টি দেখা দেয় যার প্রভাব পড়ে প্রজনন ক্ষমতার উপরেও। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের সাথে মিশে গেছে। একই ভাবে ক্যাফেইন গ্রহণের প্রবণতাও বেড়েছে। উভয় অভ্যাসই হরমোনের ভারসাম্য নষ্টের মাধ্যমে গর্ভধারণের সম্ভাবনা ক্রমশ কমাতে থাকে। এক্ষেত্রে আমাদের যথাসম্ভব প্রাকৃতিক খাবারের দিকে মনোযোগী হওয়াই শ্রেয়। 

২. ব্যায়াম ও শারীরিক কর্মকাণ্ড: ব্যায়াম ও শারীরিক কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে সুস্বাস্থ্যের নিশ্চায়ক। কিন্তু এই কসরত যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় তখন পুরুষের শুক্রাণু উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে। একই ভাবে প্রয়োজন অনুপাতে শারীরিক কসরত না হলে তা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার জন্য পুঁজি হিসেবে কাজ করে, যার প্রভাব পরে প্রজনন স্বাস্থ্যেও। 

 

৩. ওজন: অতিরিক্ত ওজনের নানান ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে যার অন্যতম হচ্ছে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং হরমোনের ভারসম্য ব্যাহত করা। আর যখনই কোন ব্যক্তি এই অবস্থায় উপনীত হয় তখন এর প্রভাব পরে প্রজনন স্বাস্থ্যে। আবার অত্যাধিক কম ওজন নারীদের ওভ্যুলেশন এর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যার ফলে সন্তান ধারনের ক্ষেত্রে নানান রকম বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় নারীদের। 

 

৪. ধূমপান ও মদ্যপান: ধুমপান ও মদ্যপান শুক্রাণু ও ডিম্বানুর গুণগত মান কমিয়ে ফেলে। এমনকি পরোক্ষ ধূমপানের ফলেও প্রজনন ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব পরে। 

 

৫. মানসিক চাপ: মানসিক চাপ সব দিক দিয়েই সুস্বাস্থ্যের প্রতি দেয়াল স্বরূপ, ব্যতিক্রম নয় প্রজনন স্বাস্থ্যও। দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ হরমোনের স্বাভাবিক ক্রিয়াকে ব্যহত করে। উদ্বেগ ও অবসাদ লিবিডো কমাতে ভূমিকা রাখে। 

  

৬. চিকিৎসা ও ঔষধ: কিছু কিছু ঔষধ দীর্ঘমেয়াদি সেবনের ফলে প্রজনন ক্ষমতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। একই সাথে হরমোনাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল দীর্ঘ সময় ব্যবহারের ফলে নারীর স্বাভাবিক উর্বরতা মন্থর হয়ে যায়। অনেকক্ষেত্রেই তা বন্ধ্যাত্বের দিকে ধাবিত হতে পারে। 

 

বন্ধ্যাত্ব (Infertility) এর পিছনে আমাদের জীবনযাত্রা কীভাবে ভূমিকা রাখে তা তো জেনে নিলাম। কিন্তু এগুলো বাদেও পুরুষ ও নারীদের ক্ষেত্রে আলাদা ও নির্দিষ্ট কিছু কারণ বিদ্যমান যা বন্ধ্যাত্বে ভূমিকা রাখে। পরের পর্বে জানবো সেই নিয়েই বিস্তারিত। 

 

সোর্সঃ

https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/infertility 

https://www.scirp.org/journal/paperinformation?paperid=116475#return4 

 

Leave a Reply