নিউট্রি টক, হেলথ টিপস

বন্ধ্যাত্বঃ এক অদৃশ্য ক্ষত (পর্ব – ২)

Khaas Nutri Talk Infertility Part 2 - বন্ধ্যাত্ব বা Infertility

আগের পর্বে আমরা বন্ধ্যাত্ব বা Infertility নিয়ে একটা বেসিক ধারনা এবং আমাদের জীবনযাত্রা ঠিক কীভাবে বন্ধ্যাত্বে প্রভাব রাখে সেই বিষয়ে জেনেছিলাম। আজ বন্ধ্যাত্ব নিয়ে এমন একটা বিষয়ে ফোকাস করতে যাচ্ছি যার প্রতি আমাদের সমাজ দৃষ্টি দেয় না বললেই চলে। তার আগে একটা ছোট্ট গল্প পড়ে নেওয়া যাক। 

আগের পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

 

সোমা আর অয়ন এক নিঃসন্তান দম্পতি, অনেকদিন ধরেই সন্তান ধারনের চেষ্টা করে চলেছেন তারা। সব ধরনের মেডিকেল টেস্টের রিপোর্ট স্বাভাবিক আসার পরও কেন যেনো সন্তান ধারণে অক্ষম তারা। এক পর্যায়ে ডাক্তার অয়নকে কিছু টেস্ট করতে দিলে সে তখন কিছু না বললেও বাসায় এসে ভীষণ রাগারাগি করে। তার ভাষ্যমতে একজন পুরুষ কেনো বন্ধ্যাত্বের শিকার হবে। সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে কেউ যদি অক্ষম হয় তবে তা হচ্ছে নারী। 

 

এই চিত্রটা আমাদের সমাজে খুবই সাধারণ চিত্র। কিন্তু জানেন কি বন্ধ্যাত্বের শিকার হতে পারেন পুরুষও। আর আজকে আলোকপাত করবো এই বিষয়ের উপরেই। 

 

বন্ধ্যাত্বে বা Infertility শিকার যখন পুরুষ

বন্ধ্যাত্ব বা Infertility মূলত প্রজননতন্ত্রের সমস্যা। সাধারণত পুরুষ প্রজনন তন্ত্রের প্রধান কাজ হচ্ছে – 

১। শুক্রানু উৎপন্ন, সঞ্চয় ও পরিবহন করা 

২। স্বাস্থ্যকর স্পার্ম তৈরি যা ডিম্বানুকে নিষিক্ত করা

এই দুইটি কাজের কোন একটি যখন সঠিকভাবে সম্পাদিত হতে পারে না তখন মূলত পুরুষ বন্ধ্যাত্বের শিকার হয়। 

 

পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ

 

১। শুক্রাণুর প্রকৃতিঃ পুরুষের শুক্রাণু যদি স্বাস্থ্যকর না হয় তবে তা সহজে ডিম্বানুকে নিষিক্ত করতে পারে না। যার ফলে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা দেয়। 

 

২। হরমোনজনিত সমস্যাঃ পুরুষ হরমোন বা পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে হরমোনের অস্বাভাবিক ক্ষরণ পুরুষের শুক্রাণুকে প্রভাবিত করে, যা পুরুষের বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। 

 

৩। দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাঃ অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে অ্যান্টিস্পার্ম অ্যান্টিবডি নিসৃত হয় যা পুরুষের শুক্রাণু বা স্পার্মকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে দেয়। এক্ষেত্রে স্পার্ম ডিম্বানু নিষেক পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে না ফলশ্রুতিতে বন্ধ্যাত্ব কড়া নাড়ে। 

 

৪। ক্রোমোজোমে ত্রুটিঃ অনেক ক্ষেত্রে ক্রোমোজোমের গঠনগত ত্রুটির কারণে একজন পুরুষ সন্তান জন্মদানে অক্ষম থাকেন। 

 

৫। জন্মগত ত্রুটিঃ মায়ের গর্ভে থাকাকালীন অবস্থায় মানবভ্রূণ যখন বিকশিত হয় তখন কোন কারণবশত যদি অনাগত পুরুষ সন্তানের প্রজনন তন্ত্র সুগঠিত হতে পারে না তখন সেই পুরুষ পরবর্তীতে জন্মদানে অক্ষম হয়। 

 

৬। প্রজনন তন্ত্রের ত্রুটিঃ পুরুষ প্রজনন তন্ত্রের জন্মগত ত্রুটি বাদেও অনেকক্ষেত্রে ত্রুটি দেখা যায়। যেমন কোন অপারেশনের ক্ষেত্রে, বা কোন রগ ফুলে গেলেও শুক্রাণু উৎপাদন বাঁধাগ্রস্থ হতে পারে। 

 

৭। ইনফেকশনঃ বিভিন্ন যৌন রোগের কারণেও শুক্রাণুর উৎপাদন বা বৈশিষ্ট্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়। 

 

এছাড়াও অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান বা অন্য কোন নেশায় আক্রান্ত হলে তার প্রভাব পরে শুক্রাণুতে। একই সাথে জেনিটাল এরিয়াতে অত্যাধিক গরম অনুভূত হওয়া বা হট ব্যাগ ব্যবহারেও বন্ধ্যাতের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। 

 

যারা আছেন ঝুঁকিতে

 

পুরুষের মধ্যে বন্ধ্যাত্ব দেখা না দিলেও কিছু ক্ষেত্রে তারা এর ঝুঁকিতে থাকেন। তেমনই কিছু কারণ এবার জেনে নেওয়া যাক। 

১। প্রোস্টেট গ্রন্থি বা তার আশেপাশে কোন ধরনের প্রদাহ বা ইনফেকশন হওয়া। 

২। টেস্টিসে কোন ধরনের আঘাত বা জখম হওয়া। 

৩। বয়োঃসন্ধি কাল অধিক দ্রুত বা বেশি দেরিতে শুরু হওয়া। 

৪। প্রজনন অঙ্গ অত্যাধিক তাপমাত্রার সংস্পর্শে আসা। 

৫। হার্ণিয়ার অপারেশন। 

৬। অগঠিত টেস্টিস। 

৭। হরমোনের অসামঞ্জস্য দেখা দেওয়া। 

৮। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দরুণ অ্যান্টিবডি দ্বারা স্পার্ম আক্রান্ত হওয়া। 

৯। জেনেটিক রোগে আক্রান্ত। 

 

পুরুষের বন্ধ্যাত্ব বা Infertility নির্ণয়ের পদ্ধতি

 

৬ মাস বা ১ বছর পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে সন্তান গ্রহণের চেষ্টা করার পরও যখন কোন দম্পতি সন্তান ধারণে অক্ষম হয় তখন সাধারণত বন্ধ্যাত্ব যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। পুরুষের ক্ষেত্রে যেভাবে বন্ধ্যাত্ব নির্ণয় করা যায় তা জেনে নেওয়া যাক। 

 

১। সিমেন অ্যানালাইসিসঃ এই পরীক্ষা করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন দিনে অন্তত দুইবার সিমেনের স্যাম্পল নেওয়া হয়। সেই সিমেন পরীক্ষা করে দেখা হয় যে উক্ত সিমেনে কি পরিমাণ শুক্রাণু উপস্থিত, শুক্রাণুগুলো কতটা স্বাস্থ্যকর, কতটা অভিন্ন এবং কতটা অ্যাসিডিক বা অম্লীয়। তাছাড়া শুক্রাণুগুলোর গতিপ্রকৃতি এবং আকারও পরীক্ষা করা হয়। 

 

২। রক্ত পরীক্ষাঃ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হয়। কেননা হরমোনের অসামঞ্জস্যতার কারণেও একজন পুরুষ বন্ধ্যা হতে পারেন। 

 

৩। আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষাঃ শুক্রাণুর ত্রুটি খুঁজে বের করতে বা প্রজননতন্ত্রের গঠনগত ত্রুটি আছে কি না তার বিস্তারিত জানতে আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করা হয়। 

 

৪। টেস্টিকুলার বায়োস্কপিঃ যদি সিমেন অ্যানালাইসিস করে জানা যায় যে সিমেনে শুক্রাণুর উপস্থিতি কম বা নেই সেক্ষেত্রে উভয় টেস্টিস থেকে একটুখানি টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হয়। 

 

এখনই সময় ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্ব নিয়ে সচেতনতার, বিশেষ করে পুরুষের। কেননা, সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে প্রথমেই আমরা নারীর দিকে তাকাই, হোক সেটা ভালো বা মন্দ যেকোন বিচাড়ে। অথচ একজন পুরুষেরও এই ক্ষেত্রে করার আছে অনেককিছু। তাই সময়ের সাথে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। 

 

**ব্লগে ব্যবহৃত নাম গুলো কাল্পনিক। 

সোর্স – 

১। https://www.hopkinsmedicine.org/health/conditions-and-diseases/infertility 

২। https://www.hopkinsmedicine.org/health/conditions-and-diseases/male-infertility 

৩। https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/infertility#:~:text=Infertility%20is%20a%20disease%20of,male%2C%20female%20or%20unexplained%20factors

Leave a Reply