পৃথিবীতে নানা ধরনের শক্তিবর্ধক খাবার রয়েছে তন্মধ্যে যে নামটি সর্বপ্রথম আসে সেটি হলো খেজুর (Khejur/Dates)। ছোট থেকে বড় সকলের কাছে জনপ্রিয় এই ফল। তবে আমাদের দেশে সবচেয়ে সবচেয়ে বেশি খেজুর (Khejur/Dates) আমদানি করা হয় সৌদি আরব থেকে। এই দেশ থেকে আমদানীকৃত খেজুর আমাদের দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় বিশেষ করে রমজান মাসে তো বাংলার ঘরে ঘরে এই ফলটি পাওয়া যায়।
খেজুর (Khejur/Dates) একধরনের তালজাতীয় শাখা বিহীন বৃক্ষ। এই বৃক্ষটি সবচেয়ে বেশি জন্মে মরু এলাকায়। এই গাছটি লম্বায় ১৫ থেকে ২৫ মিটার অব্দি লম্বা হতে পারে। এর পাতাগুলো দেখতে অনেকটা পাখির পালকের মত তবে এর মাথায় ধারালো ও চোখা কাঁটা রয়েছে। এই গাছে যে ফল ধরে এটাই মূলত খেজুর (Khejur/Dates) হিসেবে খাওয়া হয়।
খেজুরকে (Khejur/Dates) আরবিতে তুমুর বলে। মদিনায় হাজিরা দেশে ফেরার আগে খেজুর কেনায় ব্যস্ত থাকেন। খেজুর সাধারনত রমজান মাস থেকে বাজারে ওঠে এবং শাওয়াল মাস পর্যন্ত থাকে। তবে কিছু কিছু খেজুর আছে যেগুলো সারাবছরই পাওয়া যায়। এই ফলটি মূলত চারটি পর্যায়ে পাকানো হয়। আরবি ভাষায় সেগুলো বিশ্বব্যাপী কিমরি (কাঁচা), খলাল (পূর্ণাঙ্গ, ক্রাঞ্চি), রুতাব (পাকা, নরম), তুমুর (পাকা, সূর্যে শুকানো) নামে পরিচিত। গাছে ফল উৎপাদনের জন্য সচরাচর চার থেকে আট বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তবে বাণিজ্যিকভাবে ফসল উৎপাদনের উপযোগী খেজুরগাছে ফল আসতে ৭ থেকে ১০ বছর সময় লেগে যায়। পূর্ণাঙ্গ খেজুরগাছে প্রতি মৌসুমে গড়ে ৮০-১২০ কিলোগ্রাম (১৭৬-২৬৪ পাউন্ড) ফল পাওয়া যায়।
খেজুরের (Khejur/Dates) পুষ্টিগুণ
খেজুরে উপস্থিত রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান সেগুলো হলো- কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিনসমুহের মধ্যে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন, জিয়াজ্যানথিন, ভিটামিন এ, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, প্যানটোথেনিক এসিড, ফোলেট, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ফাইবার, বোরন, ফ্লুরিন, সেলেনিয়াম ইত্যাদি রয়েছে।
খেজুরের (Khejur/Dates) জাত
সৌদি আরবে অনেক জাতের খেজুর হয়। কিন্তু জনপ্রিয় কয়েকটি খেজুরের নাম হলো আজওয়া, মারিয়াম, আনবারা, সাগি, সাফাওয়ি, মুসকানি, খালাস, ওয়াসালি, বেরহি, শালাবি, ডেইরি, মাবরুম, ওয়ান্নাহ, সেফরি, সুক্কারি, খুদরি ইত্যাদি।
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় সৌদি আরবের খেজুর। কেউ সৌদি আরবে গেলে আর কিছু আনুক বা নাই আনুক খেজুর আনবেই। সৌদি আরবের বাজারে বিভিন্ন ধরনের খেজুর পাওয়া যায়। তাদের প্রতিটির আকার, স্বাদ, গন্ধ, বর্ণ বিভিন্ন রকম। এবার তাহলে জেনে নেয়া যাক কয়েকটি খেজুরের জাত সম্বন্ধে।
আজওয়া খেজুর
সৌদি আরব থেকে আমদানীকৃত খেজুরের মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয় খেজুর হচ্ছে আজওয়া। আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম নিজ হাতে আজওয়া খেজুরের বীজ রোপণ করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে এটি মদিনা শরিফের সর্বোত্তম খেজুর। হযরত মোহাম্মদ (সা.) ইফতার করতেন এই খেজুর দিয়ে। দেখতে কালো, বিচি ছোট এবং খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। তা ছাড়া এই খেজুরের দামও অন্যান্য খেজুরের চেয়ে বেশি। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খেজুর। বলা হয়ে থাকে, এই খেজুর খেলে গর্ভবতী নারীর প্রসব বেদনা কম হয়। সহিহ বুখারি হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন তাকে কোনো বিষ ও জাদু ক্ষতি করতে পারবে না।
মারিয়াম খেজুর
লালচে রঙের এই খেজুর এক থেকে দেড় ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। এই খেজুরের মধ্যে প্রাকৃতিক আঁশের আধিক্য থাকায় এর উপকারিতা ও গুরুত্ব অনেক। গবেষকদের মতে, শুকনা খাবারের মধ্যে খেজুরেই সবচেয়ে বেশি পলিফেনল থাকে। বিপজ্জনক অনেক রোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে পলিফেনল। খেজুরের চেয়ে ভালো পটাশিয়াম উৎস আর হয় না। এটা সোডিয়ামেরও ভালো উৎস। কিডনি ও স্ট্রোক জটিলতা এড়াতে এর ব্যাপক প্রয়োজন রয়েছে। এ কারণে চিকিৎসকরা প্রতিদিন এই খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। খেজুরের মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণে তেল, ক্যালসিয়াম, সালফার, আইরন, পটাসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, কপার এবং ম্যাগনেসিয়াম বিদ্যমান যা সুস্বাস্থের জন্য অতি দরকারি।
আনবারা
এই খেজুর আজওয়ার মতো ছোট নয়। আনবারা খেজুরের আকার বেশ বড়। রং লালচে বাদামি ও পুরু মাংসল এই খেজুরের বিচি খুব ছোট হয়। সৌদির বাজারে এই খেজুরও অত্যন্ত দামি।
সাফাওয়ি
এই খেজুর নরম, লম্বাটে। গাঢ় কালচে বাদামি রঙের এই খেজুর খেতে মোটামুটি মিষ্টি। এই খেজুরে রয়েছে রয়েছে উচ্চমাত্রার মিনারেল। গবেষণায় দেখা গেছে, খালি পেটে এই খেজুর খেলে পাকস্থলীর জীবাণু ধ্বংস হয়।
বারহি :
এই জাতের খেজুর দেখতে ছোট ও গোলাকার হয়ে থাকে। পাকলেও কিছুটা শক্ত ভাব থেকেই যায়। রং হয় বাদামি ও হলদেটে। এর হলদে অংশ একটু টকভাব থাকলেও বাদামি অংশ বেশ মিষ্টি স্বাদের। এই জাতের খেজুর থোকা ধরেই বিক্রি করা হয় সাধারণত। হলদে খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আয়রন, পটাশিয়াম। যখন এই খেজুর পাকার মৌসুম শুরু হয় তখন দেশটির স্থানীয় বাজারে প্রচুর পরিমাণে কিনতে পাওয়া যায়। যারা কিনা খুব মিষ্টিজাতীয় খেজুর পছন্দ করেন না, তাদের জন্য উত্তম এই জাতের খেজুর।
সেগাই :
সাধারণত রিয়াদের আশপাশে এই খেজুর চাষ হয় এবং রিয়াদে পাওয়া যায় বেশি পরিমাণে। এর দামও অনেক বেশি। শুকনো জাতের এই খেজুর হালকা মিষ্টি স্বাদের। এটা একটু শক্ত বলে মাঝে মাঝে ক্রিসপি বা কুড়মুড়ে ভাব চলে আসে খাওয়ার সময়। রং হয় হালকা হলুদ ও বাদামি বর্ণের সংমিশ্রণ।
খেজুরের অনেকগুলো জাত থাকলেও খাস ফুড আপনাদের জন্য সবচেয়ে ভালো মানের ও নিরাপদ খেজুর সরবরাহ করছে নিয়মিত। জাত দুটি হলো আজওয়া ও মারিয়াম খেজুর। অনেকেই খেজুর কেনার পর একটু সন্দিহান থাকেন যে কিভাবে এগুলো সংরক্ষণ করবেন। চলুন তাহলে এবার জেনে নেই খেজুর কেনার পর কিভাবে তা সংরক্ষণ করবেন।
সাধারণত তিন ধরনের খেজুর পাওয়া যায়। যেমন- শুকনা, আধা শুকনা ও নরম। একেক ধরনের খেজুর একেরভাবে সংরক্ষণ করতে হয়।
- খেজুর যদি এক সপ্তাহের মধ্যে খেতে চান তাহলে পলি ব্যাগে ভরে রাখতে পারেন।আর যদি এক বছর সংরক্ষণ করতে চান তাহলে কনটেইনারে ভরে ফ্রিজে রাখাই ভালো। ফ্রিজে রাখার জন্য সবচেয়ে ভালো হলো নরম খেজুর। শক্ত বা একদম শুকনো খেজুর ফ্রিজে না রাখাই ভালো। এতে আরও শক্ত হয়ে যেতে পারে।
- আধা শুকনো খেজুর ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন চুলা বা আগুনের আশপাশে না থাকে। সূর্যের আলো পড়ে এমন জায়গায়ও রাখা উচিত না।
- তবে অনেকদিনের জন্য খেজুর সংরক্ষণ করতে চাইলে প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়ে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। তবে পলিব্যাগে রাখার সময় চেপে বাতাস সব বের করে দিতে হবে। ব্যবহারের অন্তত তিন ঘণ্টা আগে ডিপ ফ্রিজ থেকে খেজুর বের করে গরম পানিতে ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। আগের মতোই নরম হয়ে যাবে খেজুর।