অল্পদিনেই স্বাস্থ্যের আমূল পরিবর্তন করে দেখিয়ে দেওয়ায়, বর্তমানে বেশ পরিচিত এক নাম কিটো ডায়েট । নানারকম ডায়েটের মধ্য থেকে অনেকেই এখন এ ডায়েটকে বেছে নিচ্ছেন।
কিটো ডায়েটের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার এড়িয়ে, দেহের কার্বোহাইড্রেটকে পুড়িয়ে ফেলা। চর্বি পোড়ানো শেষ হয়ে গেলে, শরীরের জমানো কার্বোহাইড্রেট পোড়ানো শুরু করা। ফলে ওজন কমে যায়।
কিটো ডায়েট মূলত চার প্রকার।
> স্ট্যান্ডার্ড কিটোজনিক ডায়েট: এটাতে কার্ব ৫%, প্রোটিন ২৫ % আর ফ্যাট ৭০% থাকে।
> সাইক্লিক্যাল কিটোজনিক ডায়েট: এই কিটো ডায়েটে সপ্তাহে দুদিন হাই কার্ব খাওয়া যায়।
> টার্গেটেড কিটোজনিক ডায়েট: এই কিটোতে শরীরচর্চার আগে বা পরে কার্ব খেতে পারেন।
> হাই প্রোটিন কিটো ডায়েট: এটা অনেকটা স্ট্যান্ডার্ড কিটো ডায়েটের মতোই, শুধু প্রোটিন ২৫% থেকে বেড়ে ৩৫% হয়ে যায়।
মানবদেহ চলার মূল জ্বালানি গ্লুকোজ। কিটো ডায়েটের প্রধান উদ্দেশ্যই গ্লুকোজের বদলে কিটোন বডিগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা। এ ডায়েটে কার্ব অনেক কম, ফ্যাট অনেক বেশি আর প্রোটিন মাঝামাঝি থাকে বিধায়, অনেকে একে সুপার লো-কার্ব ডায়েট বলে।
আমাদের অনেকের সাধারণ ডায়েটে ৫০% কার্বোহাইড্রেট, ২০% প্রোটিন আর ৩০% ফ্যাট থাকে। টিপিক্যাল কিটোজেনিক ডায়েটে ক্যালরিক চাহিদা পূরনের লক্ষ্যে কার্ব ৫%, প্রোটিন ২৫% আর ফ্যাট থাকে ৭০%।
*** কিটো ডায়েটে যে খাবারগুলো খেতে বাঁধা নেইঃ
পরিমাণে সবুজ শাক, সবজি।
> গরু এবং খাসির মাংস, তবে তা হতে হবে ঔষধমুক্ত এবং ঘাস, লতা-পাতা বা খড়-কুটো খেয়ে লালিত পালিত। যেমনটা খাস ফুড সরবরাহ করে থাকে।
> যে কোন প্রকার মাছ খেতে পারবেন। তবে তৈলাক্ত দেশীয় মাছের ভেতর পাঙ্গাস, বোয়াল, ইলিশ, সরপুঁটি, ব্রীগেড, গ্রাসকার্প, বাইম মাছ উত্তম। তৈলাক্ত বা সাগরের মাছ হলে আরো ভাল। মাছের ডিমও যথাসম্ভব খেতে চেষ্টা করবেন।
> অল্প পরিমাণে গরু বা খাসির পায়া খাওয়া এই সময়ে খুবই উপকারী হতে পারে। নিরাপদ গরুর পায়া পেতে অর্ডার করতে পারেন খাস ফুডে।
> প্রচুর টক জাতীয় ফল।
> মুরগির ডিম খেতে পারবেন। ফার্ম হলে সমস্যা নেই, তবে ওমেগা-৩ বা দেশী মুরগি বা হাঁসের ডিম হলে বেশী ভাল। এ ক্ষেত্রে খেতে পারেন খাস ফুডের নিরাপদ মুরগির ডিম।
> ঘি, অর্গানিক বাটার, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল, অর্গানিক এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল।
প্রায় এসবই খাস ফুডের আউটলেটে পাবেন। এছাড়া চাইলে খাস ফুডের ওয়েবসাইট থেকেও অর্ডার করতে পারেন।
> যে কোন প্রকার বাদাম। চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, অন্যান্য বাদাম যা আছে। চাইলে খেতে পারেন খাস ফুডের সুস্বাদু পিনাট বাটার। তবে অল্প পরিমাণে খাবেন।
> রং চা বা কফি খেতে পারেন দুধ, চিনি ছাড়া। খাস ফুডের গ্রীণ টি এর সাথে লেবু, আদা, সামান্য লবণ মেশাতে পারেন। কফির সাথে, MCT অয়েল, মাখন বা ঘি এবং অর্গানিক কোকোনাট অয়েল মিশিয়ে বাটার কফি বানিয়ে খেতে পারেন। এতে ভাল কাজ হবে। ***
*** কিটো ডায়েটে যে খাবারগুলো খেতে মানা করা হয়ঃ
> চালের তৈরি সব কিছু যেমন ভাত, চালের রুটি ও চাল দিয়ে বানানো যে কোনো দ্রব্যাদি।
> গমের তৈরি রুটি, পাউরুটি, বিস্কুট বা যে কোন খাবার।
> কোন প্রকার ডাল খাওয়া যাবে না।
> আলু, মিষ্টি-আলু, গাছ-আলু বা শর্করা জাতীয় সবজি, যেমনঃ মূলা।
> দই, টকদই, দুধ এবং সরাসরি দুধ দিয়ে বানানো খাবার।
> যে সকল ফার্মের মুরগিগুলোকে টেনারির বর্জ্য থেকে উৎপাদিত খাদ্য খাওয়ানো হয়, সয়া খাওয়ানো হয়, ঐ ধরনের ফার্মের মুরগি।
> যে গরু বা ষাঁড় ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে মোটা তাজা করা হয় সে সব গরুর গোস্ত। খাসির ব্যাপারেও একই কথা।
> কোক, ফলের জুস, কেক, আইসক্রীম, চকলেট, স্মুদি, যেকোনো ধরনের চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার একদম বাদ।
> যে কোনো ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার একদম বাদ। ***
ভেজিটেরিয়ানদের জন্য কিটো ডায়েট বেশ কষ্টকর ব্যাপার। কারণ কিটো ডায়েটে প্রোটিন খুব কম পরিমাণে গ্রহণ করলে, শাক-সবজি থেকে সেই প্রোটিন পাওয়াটা খুব কঠিন ব্যাপার। এছাড়া সবজিতে প্রোটিনের সঙ্গে সঙ্গে শর্করাও থাকে, যা কিটো ডায়েটে বিঘ্ন তৈরি করতে পারে।
কিটো ডায়েট মানেই প্রচুর পরিমাণ মাংস গ্রহণ এমন নয়। কিটো ডায়েটের ক্ষেত্রে ক্যালরির উৎসকে মোট তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। ৭৫% ফ্যাট, ২০% প্রোটিন এবং ৫% কার্ব। সব মিলিয়ে কিটো ডায়েট সাজানো হয়।
একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, যে জিনিস স্বল্প চেষ্টায় আসে, তা চলে যেতেও দীর্ঘদিনের প্রয়োজন হয় না৷ তাই যে কোনো ডায়েট শুরু করার আগে তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া প্রয়োজন। খুব ভাল হয়, যদি অভিজ্ঞ কারো শরণাপন্ন হতে পারেন।
আর হঠাৎ একটা ডায়েট পরিকল্পনা করে সে অনুযায়ী চলা, আবার যখন খুশি ছেড়ে দেয়া! এমনটা করতে গেলে স্বাস্থ্যের উন্নতির চেয়ে বরং অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আমরা প্রত্যেকেই ভিন্ন রকম পরিবেশ, খাদ্যাভাস ও স্বাস্থ্য নিয়ে বড় হয়েছি। অন্যের জন্য যে ডায়েট খুবই কার্যকর, তা আমার কাজে নাও আসতে পারে। তাই যথেষ্ট খোঁজখবর না নিয়ে, কোনো কিছু শুরু না করাই শ্রেয়।