হেলথ টিপস

আপনার কেনা আম কি কেমিক্যাল মুক্ত ?

ফরমালিনমুক্ত আম

—————————–

যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে – “অফ মৌসুম ছাড়া আম কি কখনও খেয়েছেন?  অনেকেই বলবেন খেয়েছি”।

দেখতে কেমন? খেতে কি মজার? বলবেন, না।

আর দেখতে, কিলিয়ে পাকার মত, কাঁচা রং, মাঝে মাঝে হলদে; আমের উপর সাদা গুড়ার আবরণ? হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন।

আসলে, আপনি কেমিক্যাল যুক্ত আম খেয়েছেন।

আসুন জেনে নেই, কী দিয়ে এই কাচা আম পাকানো হয়? কেমিক্যাল যুক্ত আম শরীরের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর? কীভাবে কেমিক্যাল যুক্ত আম চেনা যায়? কোথা থেকে কেমিক্যাল মুক্ত আম পাওয়া যায়?

আম

আম  এক প্রকারের সুস্বাদু ফল। কাঁচা অবস্থায় রং সবুজ এবং পাকা অবস্থায় হলুদ রং হয়ে থাকে। বাংলাদেশ যে প্রজাতির আম চাষ হয় তার বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা। এটি এনাকারদিয়াসি পরিবারের সদস্য। তবে পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ প্রজাতির আম রয়েছে। আমের বিভিন্ন জাত আছে, যেমন ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসা, আম্রপালি ইত্যাদি।

কেমিক্যাল মুক্ত আম

আমে কেন কেমিক্যাল মিশানো হয়? উত্তর একটাই, বেশি বেশি মুনাফা অর্জন। এই কাজ কারা করছে? এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে খাদ্যদ্রব্যে, ঔষধে এবং মানুষের ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রীতে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। এটি এখন শুধু রাজধানী ঢাকা শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং মফস্বল শহরে, এমনকি গ্রামে-গঞ্জেও তা ছড়িয়ে পড়েছে। পরিণতি? কেমিক্যাল মেশানো খাবার খেয়ে প্রায় সময় মানুষ রোগাক্রান্ত হচ্ছে, শরীরের কোন কোন অঙ্গ বিকল হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে ঘটছে অস্বাভাবিক এবং অকাল মৃত্যু।

কি দিয়ে আম পাকানো হয়? কার্বাইড দিয়ে। পুরো নাম ক্যালসিয়াম কার্বাইড। এই বস্তুটি দিয়ে ইদানীং কাঁচা আম পাকানো হচ্ছে। এই দুষ্কর্মটি শুধু আমের বেলায় নয়, আরও নানা ধরনের ফল যেমন-কলা, নাশপাতি, জাম, আনারস এবং আরও অনেক ফলে করা হচ্ছে।

কার্বাইড কী? এটি কেন আমে দেওয়া হয়?

ক্যালসিয়াম কার্বাইড এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ। এটি এক ধরণের যৌগ যা বাতাসে বা জলীয় সংস্পর্শে এলেই উৎপন্ন করে এসিটিলিন গ্যাস। যা ফলে প্রয়োগ করলে এসিটিলিন ইথানল নামক বিষাক্ত পদার্থে রূপান্তরিত হয়। এই গ্যাসের উদ্ভিদে একটা শরীর বৃত্তীয় ফাংশন আছে তা হলো কাঁচা ফল কে পরিপক্বতা বা পাকতে সাহায্য করে। তাই অধিক মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা ফল দ্রুত পরিপক্বতা বা পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে থাকে।

ক্যালসিয়াম কার্বাইড দেওয়া আম সম্পূর্ণ বিষাক্ত। এই আম খেলে মানব দেহের বিভিন্ন জটিলতা ছাড়াও ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আসুন জেনে নেই কি কি ক্ষতি হতে পারে ক্যালসিয়াম কার্বাইডে?

  • ক্যালসিয়াম কার্বাইড ত্বকের সংস্পর্শে এলে জ্বালা পোড়া হয় এবং লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে।
  • চোখের সংস্পর্শে এলে চোখেও জ্বালা পোড়া হয় এবং চোখের কর্নিয়া বিনষ্ট হতে পারে।
  • ক্যালসিয়াম কার্বাইড মুখ, গলা এবং কোমল ঝিলি্ল পর্দায় প্রদাহ সৃষ্টি করে।
  • ক্যালসিয়াম কার্বাইড থেকে উৎপন্ন অ্যাসেটিলিন গ্যাস অতিমাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে মাথা ঝিমঝিম করে, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, বমিভাব এবং বমি হতে পারে। এমনকি অ্যাসেটিলিন বিষক্রিয়ার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

কেমিক্যালযুক্ত আম খেলে কি ক্ষতি হয়?

আমের স্বাদ কেমন হয়? কার্বাইড বিক্রিয়ায় আমকে কাঁচা থেকে পাকা অবস্থায় নিয়ে আসে। আম কাঁচা, কিংবা আধাপাকা অবস্থায় থাকুক না কেন আমের বাইরে এবং ভেতরে কেমিক্যালের প্রভাব এতটাই ঘটে যে, ভেতরে বাইরে ফলটির রঙে ও স্বাদে স্বাভাবিকভাবে পাকা ফলের মতো হয়ে যায়। স্বাভাবিক পাকা ফলের মতো দৃষ্টি নন্দন বলে মানুষ আগ্রহ করে এসব কৃত্রিমভাবে পাকানো আম কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আপনি জানতেই পারবেন না যে, টাকা দিয়ে বিষ কিনলেন।

কেমিক্যালমুক্ত আম কীভাবে চিনবেন?

জেনে নিন কীভাবে কেমিক্যাল মুক্ত আম চেনা যায়? যদি এ ভাবে পরখ করে আম কেনেন-

  • কার্বাইড বা অন্য কিছু দিয়ে পাকানো আমের শরীর হয় মোলায়েম ও দাগহীন। কেননা, আমগুলো কাঁচা অবস্থাতেই পেড়ে তাতে ওষুধ দিয়ে পাকানো হয়। গাছ পাকা আমের ত্বকে দাগ পড়বেই।
  • গাছপাকা আমের ত্বকের রঙে ভিন্নতা থাকবে। গোঁড়ার দিকে গাঢ় রঙ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু,  কারবাইড দেওয়া আমের আগাগোড়া হলদেটে হয়, কখনো কখনো বেশি দেওয়া হলে সাদাটেও হয়ে যায়।
  • আম নাকের কাছে নিয়ে ভালো করে শুঁকে কিনুন। গাছ পাকা আম হলে অবশ্যই বোটার কাছে ঘ্রাণ থাকবে। ওষুধ দেওয়া আম হলে কোনও গন্ধ থাকবে না, কিংবা বাজে গন্ধ থাকবে।
  • আম মুখে দেওয়ার পর যদি দেখেন যে কোনও সৌরভ নেই কিংবা আমে টক বা মিষ্টি কোনও স্বাদ নেই, বুঝবেন সে আম ওষুধ দিয়ে পাকানো।
  • আম কেনা হলে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এমন কোথাও রাখুন যেখানে বাতাস চলাচল করে না। গাছ পাকা আম হলে গন্ধে মৌ মৌ করবে চারপাশ। ওষুধ দেওয়া আমে কোন মিষ্টি গন্ধ হবে না।

প্রশ্ন করতে পারেন, বাজারে কি কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো নয় এ রকম আম পাওয়া যাবে না?  হ্যাঁ, যাবে। যদি সঠিক উপায়ে তা সংরক্ষণ করা হয়। এটা সাধারণত দুভাবে করা হয়ে থাকে, যেমন- গাছ থেকে আম সংগ্রহের পর ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম পানিতে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট পর্যন্ত ডুবিয়ে রেখে পরবর্তীতে বাতাসে শুকিয়ে আম বাজারজাতকরণের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। বৈজ্ঞানিক এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে কোনও ধরনের বিষ প্রয়োগ ছাড়াই সর্বোচ্চ ৭ দিন পর্যন্ত আম সংরক্ষণ করা যাবে। এতে কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়ই লাভবান হবেন, সাথে ভোক্তার স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমবে।

আম সংরক্ষণের অন্য পদ্ধতি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেন, সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড দ্বারা ধৌতকরণের মাধ্যমেও আম সংরক্ষণ করা সম্ভব। গরম পানির সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড দ্রবণে ধৌতকরণ পদ্ধতিতে ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রতি লিটার পানিতে ৪০ মিলিলিটার হারে বাণিজ্যিক সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড মেশাতে হবে। তারপর দ্রবণের মধ্যে আম সর্বোচ্চ ৫ মিনিট পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখতে হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ভেজালের সার্বজনীন যে উৎসব চলছে তাতে আমরা সবাই কমবেশি আক্রান্ত। ফল-মূল, মাছ-মাংস, সবজি এমনকি দুধ বা দুগ্ধজাত মিষ্টিতেও কেমিক্যাল মিশানো হচ্ছে। অবস্থা এমন যে ক্রেতা জানেন খাদ্য-পণ্যটি কেমিক্যাল মিশ্রিত তবুও তিনি কিনছেন কারণ, অন্য কোন সুযোগ তার কাছে নেই।

না, সুযোগ আছে। যদি কেমিক্যাল মুক্ত আম পেতে চান, আজই অর্ডার করুন khaasfood.com  এ, আর আম কিনুন বাড়ীতে বসে!

আমসহ অন্যান্য বিভিন্ন ফল অনলাইনে অর্ডার করুণ এখান থেকেঃ Order Fruit Online from Khaasfood

আরও পড়ুন

Leave a Reply