কখনো ক্ষুধার তাড়নায় আবার কখনো রসনাবিলাস, খাবারের প্রয়োজন হয় জীবনের তাগিদে। প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো পরকালের জীবনেও মানুষের খাবারের প্রয়োজন হবে। পরকালের পাথেয় হিসেবে সোনা রুপার পাশাপাশি দেওয়া হতো সোনাবরণ মধু।
সভ্যতার ইতিহাসে খাদ্য সংরক্ষণের ইতিহাস সুপ্রাচীন। খাবার সংরক্ষণের শুরুটা আপদকালীন বন্দোবস্ত হিসেবে হলেও এখন আর সেখানে সীমাবদ্ধ নেই। যেকোন খাবার সংরক্ষণের পূর্বশর্ত হলো সেটাকে প্রক্রিয়াজাত করা।
আধুনিক যুগে আমরা কতোই না প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়ে থাকি। অনেক অনেক আগে গুহাবাসী শিকারীরা ধোঁয়ায় শুকিয়ে সংরক্ষণ করতো মাছ গোশত। সেটাই হালের শুঁটকি। এই অঞ্চলের মানুষকে ফল-সব্জী সংরক্ষণ এর প্রক্রিয়া শিখিয়েছে পর্তূগীজ বণিকেরা।
কোন রকমের কারসাজি ছাড়াই হাজার বছর টিকে থাকে যে খাবার তা হলো মধু। মধু মূলত ফুলের নির্যাস। মৌমাছির দল ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে সংগৃহীত মধু জমা করে মৌচাকে।
সৃষ্টিজগতের অপার বিষ্ময় ফুল! স্পর্শে কোমল, রঙ-বেরং এর ফুল থেকে নির্যাস টেনে নেওয়া মানুষের অসাধ্য। ফুলের মতো ফুলের নির্যাস ও নানা রঙ এ রঙ্গিন।
ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে একেবেঁকে মৌচাকের দিকে ছুটে চলা মৌমাছির দল গুঞ্জন তোলে মহান রবের নামে। সুবাহান আল্লাহ!
অপরুপ এই দৃশ্য সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কোরআন মাজীদের সূরা আন নাহল এর ৬৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন, নানা রঙ এ রঙ্গীন নির্যাসে পূর্ণ মৌমাছির পেট ভর্তি হয়েছে মানুষের জন্য শিফা, রোগ মুক্তির অমিয় সুধায়। এ নিশ্চয় চিন্তাশীলদের জন্য এক চরম নির্দশন।
তরল মধু জমা হয় মোমের তৈরী প্রকোষ্ঠে। কাজ সেখানেই শেষ নয়। মধু প্রকোষ্ঠের উপর ঘুরে ঘুরে সেকেন্ডে ২৩০ বারের বেশি ডানা ঝাপটে সংগৃহীত মধুকে সংরক্ষণের উপযোগী করে তোলে মৌমাছির দল। মহান আল্লহর কুদরতে এই মধু সংরক্ষণে আর কোন রকমের প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রয়োজন হয় না।
সম্প্রতি প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর পুরনো মধু পাওয়া গেছে প্রাচীন মিশরীয় মমির সাথে। আলহামদুলিল্লাহ সেই মধু এখনো খাওয়ার উপযোগী।
আমাদের অনেকের সকালটা শুরু হয় চা অথবা কফি পানের মধ্যমে। গরম পানীয়ের উষ্ণতা ভেতর থেকে চাংগা তোলে আমাদের। দুয়েক চামচ চিনি আমাদের সকালের পানীয়কে আরো উপভোগ্য করে তোলে।
শক্তি পরিমাপের একক হলো ক্যালরি। দেহের ওজন কমাতে হলে দৈনিক ক্যালরি খরচের পরিমান হতে হবে ক্যালরি গ্রহণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক নারীর দৈনিক নিরাপদ ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা ১০০, পুরুষের ১৫০। এক চামচ চিনিতে আছে ১৬ ক্যালরি, অন্যদিকে মধুতে আছে ২২ ক্যালরি।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ক্যালোরি গ্রহণ নিয়ন্ত্রনের জন্য চিনি খাওয়া উত্তম। কিন্তু, মধুর মিষ্টতা চিনির চাইতে বেশি, প্রায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ, এক চামচ চিনির বিপরীতে আধা চামচ মধু যথেষ্ট। এক চামচ চিনিতে আছে ১৬ ক্যালোরি অন্যদিকে আধা চামচ মধুতে আছে ১১ ক্যালোরি।
চিনির বদলে মধু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে ওজন কমানোর যুদ্ধে একটু হলেও এগিয়ে থাকা সম্ভব। এ যেন পবিত্র কোরআনের সেই বানীর সাথে মিলে যায়, চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন।
ত্বকে তারুণ্যের আভা ধরে রাখতে অল্প একটু আসল মধু মেখে মিনিট পনেরো রেখে দিলে উপকার পাওয়া যায়। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। যেকোন ধরনের ত্বকে ব্যবহার সম্ভব প্রাকৃতিক এই এন্টি-ফাংগাল।
সকালের শুরুটা যদি হয় বিশুদ্ধ মধু পানের মধ্য দিয়ে তাহলে দিন কাটে চনমননে। প্রচুর ক্যালোরি উপাদান থাকায় মাত্র দুই চামচ মধু হতে পারে দিনের প্রয়োজনীয় শক্তির অন্যতম উৎস।
সন্তান লালন পালনে মায়েদের হতে হয় সুপার ওম্যান। সারাদিনের ছুটোছুটি, কাজের শেষে ক্লান্তিতে অসাড় হয়ে আসে দেহমন। মধু হতে পারে মায়েদের আদর্শ পথ্য। শুধু শারীরিক শক্তি নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও মধুর জুড়ি মেলা ভার। অবসাদ কাটাতে মধুর চাইতে ভালো বন্ধু আর কেউ নেই।
ঠান্ডা সর্দিজনিত পুরনো ব্যাধির উপশম হতে পারে শুধুমাত্র আসল মধুর সাহায্যে। এছাড়া কিছু কিছু এলার্জির ক্ষেত্রেও আরাম পাওয়া যায় মধু পানে।
এতো এতো উপকারী এই নিয়ামত ও হতে পারে অকল্যাণের কারন। খোলা বাজারে পাওয়া অনেক মধুতে চিনি মেশানো হয়। আসল মধু খেলে রক্তে চিনির মাত্রা খুব বেশি বাড়ে না তাই বহুমুত্র রোগীরাও অল্প পরিমাণে মধুপান করতে পারেন। কিন্তু চিনি মেশানো মধু পান হতে পারে ভয়ানক বিপদজনক।
যেকোন খাবারের মতো মধুকে কৃত্রিম উপায়ে প্রক্রিয়জাত করা হলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। বাজারে প্রচলিত প্রক্রিয়জাতকরণ পদ্ধতিগুলোর অন্যতম হলো মধুকে উত্তপ্ত করা। এরফলে মধু ঘন হয় এবং মধুতে চিনির অনুপাত বৃদ্ধি পায়। পুষ্টিগুন অক্ষুন্ন থাকেনা।
খাস ফুডের ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে সেরা এবং আসল খাবারের উপর। মধু ও এর ব্যাতিক্রম নয়। আমাদের মিশ্র ফুলের মধুতে আছে উপরে বর্ণিত সকল গুণাবলী। আমরা সবসময় চাকভাংগা মধু সরাসরি মোড়কীকরণ করে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেই তাই ইন শা আল্লাহ সকল গুণমান থাকে অটুট।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআন মাজীদে যে শিফার কথা বলেছেন সেটা মিথ্যা হতে পারে না। একমাত্র বিজ্ঞ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভালো বলতে পারেন মধুতে আর কোন কোন গুণাবলী রয়েছে, কোন কোন রোগের শিফা আছে এই বিষ্ময়কর অমিয় সুধায়।
সকল মধুর উপকারিতা প্রায় একইরকম, মধুর কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে মধুর পার্থক্য হয়ে থাকে।
কালোজিরা ফুলের মধু বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ এ্যাজমার মত যটিল ও কঠিন রোগ দুর হয়, সর্দি-কাশির উপশম, শারীরিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য শক্তি যোগায় এবং এই মধুর ক্যালোরি গুণ অন্যান্য ফুলের মধুর চাইতে অনেক বেশি।