Uncategorized, খাদ্যের গুনাগুণ, খাসফুড আপডেট

মরিঙ্গা (Moringa) – প্রকৃতির এক চমৎকার আশীর্বাদ

Khaas Food Moringa Powder

মরিঙ্গা (Moringa) বর্তমানে বেশ প্রচলিত এক নাম। যে মরিঙ্গা নিয়ে এতো আলোচনা সেটা কিন্তু একেবারেই দেশীয় এক উপাদান, যাকে আমরা সজনে বা সজিনা হিসেবে চিনে থাকি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Moringa Oleifera যা ইংরেজিতে Drumstick নামেও পরিচিত। এই সজিনার উৎপত্তিস্থল পাক – ভারত উপমহাদেশ। এর ভেষজ গুণাবলী, পুষ্টিমান এবং সহজলভ্যতার কারণে একে অলৌকিক বৃক্ষ বা মিরাকেল ট্রি বলেও অভিহিত করা হয়। সজিনা পাতার পুষ্টিগুণ বিবেচনায় বিজ্ঞানীগণ একে সুপারফুড বলে আখ্যায়িত করেছেন। 

পুষ্টির ডিনামাইট মরিঙ্গা (Moringa)

মরিঙ্গা বা সজিনা কে মাল্টিভিটামিন বৃক্ষ বলেও আখ্যায়িত করা হয়। এর পাতা ও ডাটায় রয়েছে অনুপুষ্টির আধার। এটি থেকে দৈনিক চাহিদার ৩ শতাংশ ক্যালরির যোগান নিশ্চিত করা সম্ভব। এতে ৮ ধরনের অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড ছাড়াও আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যামাইনো এসিড বিদ্যমান। এতে ৩৮ শতাংশ আমিষ রয়েছে যা অধিকাংশ উদ্ভিদেই নেই। তাছাড়া এই সজিনা ডায়েটারি ফাইবার বা খাদ্য আঁশের বেশ ভালো উৎস। মরিঙ্গা (Moringa) থেকে কমলার চেয়ে ৭ গুন বেশি ভিটামিন সি, দুধ অপেক্ষা ৪ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম এবং গাজরের অপেক্ষা ৪ গুণ বেশি ভিটামিন এ এবং কলার চেয়ে ৩ গুণ বেশি পটাসিয়াম পাওয়া যায়। সজিনা পাতা থেকে ৭১ শতাংশ আয়রণ পাওয়া যায় যা দেহে আয়রনের অভাবে সৃষ্ট রক্তশূণ্যতা রোধে কার্যকরী। ১ থেকে ২ বছর বয়সী শিশুদের দেহে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ করতে দৈনিক এক টেবিল চামচ সজিনা পাতার গুঁড়া যথেষ্ট। এই পাতা গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়ের ক্যালসিয়াম ও আয়রণের চাহিদা পূরণে সক্ষম। 

 

যেসব রোগের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে সজিনা বা মরিঙ্গা

আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে মরিঙ্গা বা সজিনা প্রায় ৩০০ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা সম্ভব। এর নানান ঔষধী গুনাবলীর জন্য যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে শিকড়, বাকল ও পাতা সহ এই মিরাকেল ট্রি এর বিভিন্ন অংশ।

ত্বকের যত্নেঃ 

মরিঙ্গা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী কোষের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। ফলে কোষের ক্ষতি হওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায় এবং ত্বক থাকে প্রাণবন্ত। 

লিভারের সুস্থতায়ঃ

এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে মরিঙ্গা বা সজিনা পাতা নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার এর হাত থেকে সুরক্ষা দেয়। একই সাথে লিভারের ইনফ্লামেশন বা প্রদাহজনিত সমস্যা রোধে সাহায্য করে। 

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেঃ

গবেষণায় উঠে এসেছে যে খাবারে সজিনা পাতার ব্যবহার দেহের কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড বা সংক্ষেপে TG কমাতে সহায়ক। 

ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ

সজিনায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ এর অ্যান্টিক্যান্সার গুণাবলী দেহে ক্যান্সার কোষ ধ্বংশের মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে স্তন, লিভার, কোলন এবং কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। 

পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতায়ঃ

সজিনায় ল্যাক্সেটিভ গুণাগুণ বিদ্যমান যা কোষ্টকাঠিন্য রোধ করতে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া এটি পাকস্থলীর অ্যাসিডিক মাত্রা ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম যা পেপটিক আলসার এর বিরুদ্ধে কাজ করে। পাশাপাশি এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিবায়োটিক গুণাগুণ ক্ষতিকর প্যাথোজেনের প্রভাব থেকে সুরক্ষা দেয়। 

হৃদসুরক্ষায়ঃ

সজিনা বা মরিঙ্গা তে আছে কুয়েরসেটিন নামক এক ধরনের অ্যান্টিইনফ্লামেটরি গুণাগুণ বিশিষ্ট উপাদান যা লিপিড ফরমেশন এবং ইনফ্লামেশন রোধ করে হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখে। পাশাপাশি কিছু মানুষের উপর করা একটি গবেষণায় উঠে আসে যে প্রতিদিন ১২০ গ্রাম রান্না করা সজিনা পাতা এক সপ্তাহ সেবনে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে। 

রক্তশূন্যতা রোধেঃ

সজিনা আয়রণের এক চমৎকার উৎস। এটি রক্তশূন্যতা রোধে ভালো কাজ করে। তবে সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপার হচ্ছে দেহের অতিরিক্ত আয়রন নিয়ন্ত্রণেও এই সজিনা কাজ করে থাকে। ফলে অতিরিক্ত আয়রন গ্রহণের ফলে সৃষ্ট সমস্যা থেকেও পরিত্রাণ ঘটাতে সক্ষম এই সুপারফুড হিসেবে খ্যাত সজিনা বা মরিঙ্গা।  

চোখের স্বাস্থ্য উন্নতিতেঃ

সজিনা পাতায় প্রায় ২৬,১০০ মাইক্রোগ্রাম পরিমাণ ল্যুটেইন এবং জিয়াজ্যান্থিন বিদ্যমান যা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া এটি বিটা ক্যারোটিনেরও বেশ ভালো উৎস যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে কাজ করে। 

যেভাবে গ্রহণ করবেন সজিনা বা মরিঙ্গাঃ

সজিনা বা মরিঙ্গা গুঁড়া নানান ভাবে গ্রহণ করা সম্ভব। যেভাবেই গ্রহণ করা হোক না কেনো তা আমাদের সুস্থতায় ভূমিকা রাখে। তেমনই কয়েকটি উপায় হচ্ছে – 

  • ফলের জুস বা স্মুথি প্রস্তুতের সময় ব্যবহার করা যায়।
  • সালাদে ড্রেসিং হিসেবে সজিনা বা মরিঙ্গা পাতার গুঁড়ার ব্যবহার সম্ভব। 
  • সজিনা বা মরিঙ্গা গুঁড়া পানিতে মিশিয়েও গ্রহণ করা যায়। 
  • কেক, বিস্কুট বা কুকিজ প্রস্তুতের সময় ব্যবহার করা যায়। 
  • বিভিন্ন ধরনের সস বা চাটনি তৈরির সময় ব্যবহার করা যায়। 
  • রান্নার শেষের দিকে সবজি বা তরকারির উপর ছিটিয়ে দেওয়া যায়। 

যেভাবেই গ্রহণ করা হোক না কেনো এর পুষ্টিগুণ সুস্থতায় ভূমিকা রাখতে সম্ভব। 

বর্তমানের ভেজালের মিশ্রণে ক্রমেই নানান রোগ যেনো জেঁকে বসছে। এর থেকে পরিত্রাণে মুঠি মুঠি ঔষধ সেবনের দিকে ধাবিত হতে হচ্ছে সকলকেই। কিন্তু এই সব ঔষধেরও রয়েছে নানান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। ফলে অসুস্থতার এক অমোঘ চক্রের দিকে ধাবিত হতে হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণে চাই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি। আর সেক্ষেত্রে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত সজিনা এক উত্তম উপায়। তবে আজকাল এই সজিনা গুঁড়া বা মরিঙ্গা পাউডারের নামে অন্যান্য সামগ্রীর মিশ্রণে তৈরি উপাদানের দেখাই মিলছে। এক কথায় বলতে গেলে মিলছে ভেজাল মিশ্রিত মরিঙ্গা পাউডার। এর থেকে বাঁচতে আর সুস্থ থাকতে মরিঙ্গা পাউডার কোথা থেকে সংগ্রহ করছেন তা অবশ্যই যাচাই করে নেওয়া আবশ্যক। কেননা নিরাপদ খাদ্যই সুস্থতার পথে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায় আরও এক ধাপ। 

Leave a Reply