শীতের আয়োজন

সরিষার তেলের উপকারিতা জেনে নিন।

সরিষা বীজ থেকে তৈরি হয় সরিষার তেল এটা আমাদের সবারই জানা। কিন্তু সরিষার তেলের উপকারিতা জানে কজন? এটি গাঢ় হলুদ বর্ণের হয় এবং বাদামের মত সামান্য কটু স্বাদযুক্ত ও শক্তিশালী সুবাস যুক্ত তেল। ঐতিহ্যগত ভাবে এই তেল আমাদের পূর্বপুরুষেরা ব্যবহার করে আসছেন অনেক আগে থেকেই। ওমেগা আলফা ৩, ওমেগা আলফা ৬ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই ও  অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের  সমৃদ্ধ উৎস হওয়ায় সরিষার তেলকে স্বাস্থ্যকর তেল বলা হয়। এর ঔষধি গুণাগুণের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে এই তেল।

রূপচর্চায় রয়েছে সরিষা তেলের বিশাল ভূমিকা। অনেকে চুলের যত্নে মাথায় সরিষার তেল ব্যবহার করে থাকেন। চুলের আগা ফাটা, চুল পড়া রোধ, চুল ঘনকালো করতে সরিষা তেলের ভূমিকা অনেক। তবে ত্বকের যত্নেও রয়েছে এর অনেক ব্যবহার।

সরিষা তেল ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে জেনে নিতে হবে যে আপনার সরিষার তেল খাঁটি কিনা? নকল বা ভেজাল সরিষার তেল ব্যবহারের ফলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি।

সরিষার তেলের উপকারিতা

চলুন ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্যের জন্য সরিষার তেলের অসাধারণ কিছু উপকারিতার কথা জেনে নেই –


ত্বকের তামাটে ভাব দূর করে

সরিষার তেল ত্বকের তামাটে ভাব ও দাগ দূর করে এবং ত্বককে প্রাকৃতিক ভাবে উজ্জ্বল করতে পারে। এজন্য বেসন, দই, সরিষার তেল ও কয়েকফোঁটা লেবুর রস একত্রে মিশিয়ে মিশ্রণটি আপনার ত্বকে  লাগান। ১০-১৫ মিনিট পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে ৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।


প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন

যেহেতু সরিষার তেল খুব ঘন হয় এবং এতে উচ্চমাত্রার ভিটামিন ই থাকে সেহেতু এই তেল ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ থেকে ত্বককে সুরক্ষা করে। তাই এটি স্কিন ক্যান্সার ও প্রতিরোধ করতে পারে। ভিটামিন ই বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর করতেও সাহায্য করে। তাই সানস্ক্রিন লোশনের মতোই ব্যবহার করতে পারেন এই সরিষার তেল। তবে এই তেল যেহেতু ঘন তাই ত্বকে লাগানোর পর ভালো ভাবে ঘষে নিতে হবে যেনো অতিরিক্ত তেল লেগে না থাকে। অন্যথায় অতিরিক্ত ধুলাবালি জমা হয়ে ত্বকের ভালোর চেয়ে খারাপই হতে পারে বেশি।


ঠোঁটের যত্নে

শুষ্ক ঠোঁটের যত্নে সরিষার তেল চমৎকার প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। লিপ বাম বা চ্যাপ স্টিক এগুলোর পরবর্তী সরিষার তেল  ব্যবহার করতে পারেন।


চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে

সরিষার তেল চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, অকালে চুল সাদা হওয়া রোধ করে ও চুল পড়া কমায়। সরিষার তেলে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ থাকে। বিশেষ করে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন থাকে এতে। বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়ে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফ্যাটি এসিড ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা চুলের বৃদ্ধিতে অনেক সাহায্য করে।এছাড়া প্রতি রাতে চুলে সরিষার তেল মালিশ করে লাগালে চুল কালো হয়।


ক্ষুধা বৃদ্ধি করে

ক্ষুধার উপর সুস্বাস্থ্য অনেক নির্ভর করে। পাকস্থলীর পাচক রস উদ্দীপিত করার মাধ্যমে ক্ষুধা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে সরিষার তেল। যাদের ক্ষুধার সমস্যা আছে তারা রান্নার সময় সরিষায় তেল ব্যবহার করতে পারেন।


উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে

সরিষার তেল পরিপাক, রক্ত সংবহন ও রেচন তন্ত্রের শক্তিশালী উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া খাওয়ার পাশাপাশি বাহ্যিকভাবে শরীরে ম্যাসাজ করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন এবং ঘর্ম গ্রন্থি উদ্দীপিত হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা কমে।


ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

সরিষার তেলে গ্লুকোসিনোলেট নামক উপাদান থাকে যা অ্যান্টিকারসিনোজেনিক উপাদান হিসেবে পরিচিত। তাই এটি ক্যান্সারজনিত টিউমারের গঠন প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট কোলোরেক্টাল ও গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ক্যান্সার থেকে সুরক্ষাও প্রদান করে।

এছাড়াও অ্যাজমা ও সাইনুসাইটিসের প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে সরিষার তেল অত্যন্ত কার্যকরী, ঠান্ডা-কাশি নিরাময়েও চমৎকার কাজ করে। এটি ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে, এতে অ্যালাইল আইসোথায়োসায়ানেট নামক অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান থাকে বলে ছত্রাকের ইনফেকশন নিরাময়েও কাজ করে। সরিষার তেলের তীব্র সুবাস পোকামাকড় তারায় বলে ম্যালেরিয়া ও পোকারকামড় জনিত রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। সরিষার তেল শিশুর হাত-পায়ের দৈর্ঘ্য ও ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সরিষার তেল শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। পরিশেষ বলা যায়, স্বাস্থ্যের জন্য বহুমাত্রিক টনিক হিসেবে কাজ করে সরিষার তেল।


চুল পাকা রোধ করতে

সরিষা তেলের পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন, মিনারেল চুলের অকালপক্কতা রোধ করে থাকে। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সরিয়া তেল ম্যাসাজ করুন চুল এবং মাথার তালুতে যা আপনার চুল পাকা রোধ করবে।


  ঠোঁট ফাটা রোধ করে

ঠোঁট ফাটা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। অনেকের এই সমস্যা এত বেশি হয়ে থাকে যে লিপবাম কাজ করে না। সমাধান? অল্প একটু সরিষা তেল নিয়ে ঠোঁটে লাগান।  এই প্রাকৃতিক ময়োশ্চারাইজার ঠোঁট ফাটা রোধ করে ঠোঁট নরম কোমল করে তোলে।

খাঁটি সরিষার তেল কোথায় পাবেন?

নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরিষার তেল কতটা কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু যেকোনো সরিষার তেল কি আমাদের জন্য উপকার বয়ে আনবে? মোটেও তা নয়। দোকানের খোলা সরিষার তেল এ ভেজাল মিশ্রিত থাকে, যা ব্যবহার করলে নানারকম অসুখ বিসুখ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও বোতলজাত সরিষার তেলে রয়েছে ক্ষতিকর ক্যামিকেল এবং প্রিজারভেটিভ। তাই খাঁটি সরিষাল কেনার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে।

স্বস্তির কথা হচ্ছে, নিরাপদ খাদ্যপন্যের সরবরাহকারী অনলাইন শপ খাসফুড নিয়ে এসেছে বাজারের সেরা সম্পূর্ণ খাঁটি এবং ক্যামিকেল মুক্ত সরিষার তেল। অনলাইনে অর্ডার করার এক দিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়। আর দেরি না করে সুলভ মুল্যে কিনে নিন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি খাঁটি সরিষার তেল

Leave a Reply