সকালের নরম কুয়াশা গায়ে জড়িয়ে গরম গরম পিঠা খাওয়ার যে প্রতিযোগিতা লাগতো, তোদের মনে আছে তো? শীতের পিঠাপুলির যেনো স্বাদই আলাদা, আহা! পুলি পিঠা আর পাটিসাপটা, ভাপা পিঠা আরও কত কি!
মনে থাকবে না আবার! সাজুকে যে হারানোই যেতো না। কি রে সাজু, এখনও কি সেই আগেরমতনই পিঠা খাস নাকি বয়সের ভারে একটু আধটু কমলো?
আর পিঠে খাওয়া! বয়সের ভারে না কমলেও আধুনিকতার ভিড়ে ঠিকই হারিয়ে গেলো রে। এখন কি আর সেইসব দিন আছে! না মা আছেন, না পিঠে বানিয়ে খাওয়ানোর মানুষ!
বাবা তার ছোটবেলার বন্ধুদের সাথে মেতে উঠেছে স্মৃতিচারণে। কিন্তু বাবার যে শীতের পিঠাপুলি এতো পছন্দের তা তো জানা ছিলো না! কি করে বাবাকে চমকে দেওয়া যায় তা ভাবতেই বের হয়ে এলো সহজ সমাধান। বাবার জন্য তার পছন্দের পিঠা বানিয়ে ফেললেই হয়। বাবার পছন্দের পিঠা কোনটি তা তো জানা আছে, কিন্তু তা বানাবো কি করে!
বাবার জন্য এমন সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে অনভিজ্ঞ মেয়ের হিমিশিম খেতেই হয়। তাই বলে কি আর সারপ্রাইজ দেওয়া হবে না! অবশ্যই হবে। তার জন্যই রয়েছে শীতের দুইটি অতি জনপ্রিয় পিঠার রেসিপি, যেনো বাবা আর মেয়ের মাঝে এমন অনাবিল আনন্দের মুহূর্ত ফিঁকে না হয়ে যায়।
প্রথমেই আসা যাক পুলি পিঠা প্রস্তুতিতে। পুলি পিঠা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
১. কোরানো নারকেল – দেড় কাপ
২. গুঁড় – এক কাপ
৩. এলাচ – একটি
৪. দারুচিনি – মাঝারি আকারের ২ টুকরো
৫. চালের গুঁড়া – ১ কাপ
৬. ময়দা – আধা কাপ
৭. ভাজার জন্য তেল
প্রস্তুত প্রণালিঃ
১। প্রথমে একটি ফ্রাইপ্যানে নারকেল, গুঁড়, দারুচিনি ও এলাচ নিয়ে অল্প আঁচে নাড়তে হবে। গুঁড় গলে আঁঠালো ভাব হয়ে আসলে চুলা বন্ধ করে ঠান্ডা করে নিতে হবে।
২। এবার আরেকটি পাত্রে দেড় কাপ পানি ও ১ চা চামচ লবণ মিশিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। এতে চালের গুঁড়া ও ময়দা মিশিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ৫-৭ মিনিট জ্বাল করতে হবে। এরপর ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে ঠান্ডা হওয়ার জন্য রাখতে হবে।
৩। ঠান্ডা হয়ে এলে হাতের সাহায্যে মথে নরম খামির বানিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজন মনে হলে অল্প পরিমাণে ঠান্ডা পানি মিশিয়েও মথে নিতে পারেন।
৪। খামিরটাকে দু’ভাগ করে এক ভাগ নিয়ে কিছুক্ষণ মথে লম্বা করে নিয়ে চাকু দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কাটতে হবে। এবার টুকরোগুলো নিয়ে বলের আকার করে ছোট ছোট রুটির মতন গোল করে বেলে নিতে হবে।
৫। এরপর এতে কিছু নারকেলের পুর ভরে বন্ধ করে দিতে হবে। তারপর দু’হাত দিয়ে চেপে পিঠার আকৃতি দিতে হবে।
৬। পরবর্তীতে খাওয়ার জন্য সংরক্ষণ করতে চাইলে এ পর্যায়ে জিপ-লক ব্যাগে ভরে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করতে পারেন।
৭। সংরক্ষণ না করতে চালে এবার কড়াইয়ে পর্যাপ্ত তেল দিয়ে মাঝারি আঁচে গরম করতে হবে।
৮। তেল হালকা গরম হয়ে এলে প্রস্তুত করে রাখা পিঠা দিয়ে অল্প আঁচে ভাজতে হবে। একপাশ লালচে হয়ে গেলে উল্টে দিয়ে অন্য পাশে ভাজতে হবে। দুই পাশ বাদামি করে ভেজে নিতে হবে।
৯। ভাজা হয়ে গেলে নামিয়ে টিস্যু পেপার এর উপর রেখে অতিরিক্ত তেলগুলো শুষে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।অতপর ঠান্ডা করে পরিবেশন করা যাবে।
এবার জেনে নেই পাটিসাপটা বানানোর পদ্ধতি। পাটিসাপটা বানাতে দুই ভাগে উপকরণগুলো প্রস্তুত করতে হয়। প্রথমে পাটিসাপটা বানাতে আর দ্বিতীয়ত পুর বানানোর জন্য।
পাটিসাপটা বানানোর উপকরণঃ
ময়দা – আধা কাপ
ঠাণ্ডা পানি – দেড় কাপ
লবণ – আধা চা-চামচ
চালের গুঁড়া – ১ কাপ
চিনি – ১ টেবিল চামচ
পুর বানানোর উপকরণঃ
দুধ – ১ লিটার দুধ
ঘি – ২ টেবিল চামচ
সুজি – ২ টেবিল চামচ
এলাচ গুঁড়া – আধা চা-চামচ
খেজুরের গুড় – ১ কাপ
নারিকেল কোরানো – ১ কাপ
প্রস্তুত প্রণালিঃ
১। প্রথমে ময়দা, লবণ, চালের গুঁড়া, চিনি এবং পানি মিশিয়ে মাঝারি আকারের পাতলা গোলা তৈরি করে রাখতে হবে।
২। গোলা তৈরি হয়ে গেলে তা সাইডে রেখে পুর বানানোর দিকে অগ্রসর হতে হবে।
৩। পুর বানানোর জন্য একটি পাত্রে ১ লিটার দুধ নিয়ে সেটা ফুটিয়ে ১ কাপ করতে হবে।
৪। এরপর একটি প্যানে ঘি গরম করে সুজি দিয়ে হালকা আঁচে কিছুক্ষণ ভেজে নিতে হবে। সুজি হালকা ভাবে ভাজা হয়ে গেলে তাতে নারিকেল, এলাচ গুঁড়া, গুড় আর ঘন করে রাখা দুধ দিয়ে দিতে হবে।
৫। এবার ঘন হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত অনবরত নাড়তে হবে। ঘন হয়ে যখন প্যান থেকে উঠে উঠে আসবে তখন নামিয়ে নিতে হবে।
৬। এবার নন-স্টিক প্যান নিয়ে তাতে একটু তেল ব্রাশ করে অল্প গরম করে নিতে হবে।
৭। প্যান মোটামুটি গরম হয়ে গেলে তাতে আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা গোলা ডালের চামচের এক চামচ নিয়ে ঢেলে রুটির মতন করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
৮। এবার এই গোলার রুটির উপরের দিকটা যখন শুকিয়ে আসবে তখন একপাশে খানিকটা পুর দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে।এরপর এপিঠ ওপিঠ সেঁকা শেষে নামিয়ে ফেলতে হবে।
এভাবেই বাকি গোলা ও পুর দিয়ে পাটিসাপটা তৈরি করে পরিবেশন করতে হবে।
পুলি পিঠা আর পাটিসাপটা যেকোন খাবার সঠিক ভাবে প্রস্তুতির জন্য চাই সঠিক রেসিপি এবং মানসম্মত উপকরণ। তাইতো শীতের পিঠাপুলির বেলায়ও প্রয়োজন মানসম্মত উপকরণ। খাঁটি খেজুর গুঁড় ও চালের গুঁড়া ছাড়া যেমন পিঠার আসল স্বাদ পাওয়া যায় না তেমনই পিঠাও ঠিক ভালোভাবে প্রস্তুত করা সম্ভব হয় না। এবার থেকে এই সহজ রেসিপি মেনে আপনিও মজাদার সব পিঠা প্রস্তুত করতে পারবেন ঘরে বসেই। একই সাথে স্মৃতিপটে আরও একবার জাগ্রত হবে শীতের সকালের মিষ্টি মধুর সব মুহুর্ত। আর শীতের আমেজ পাওয়া যাবে ষোল আনা।