গোল্ড হানি (Gold honey) – শুনতে অন্যরকম লাগলেও সাধারণের মধ্যে অসাধারণ এক চমক হচ্ছে এই মধু। সাধারণত সুন্দরবনের প্রাকৃতিক চাকের মধুতে গরান, কেওড়া, খলিসা সহ অন্যান্য বুনো ফুলের নেক্টার উপস্থিত থাকে। কিন্তু এই গোল্ড হানিতে থাকে খলিসা ফুলের নেক্টারের আধিক্য। মধুতে যে ফুলের নেক্টার অধিক পরিমাণে থাকে সেই ফুলের নাম অনুসরণ করেই মধুর নামকরণ করা হয়ে থাকে। আর গোল্ড হানিতে খলিসা ফুলের নেক্টার থাকে প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশ। তাই বুঝতেই পারছেন আদতে খলিসা ফুলের মধুকেই গোল্ড হানি হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে আপনাদের সামনে।
নামকরণের স্বার্থকতা
কেনো এই রূপক বা আলঙ্করিক নামকরণ, তা অনেকের কাছেই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে এর সাদাটে লালচে রঙ যা অনেকটা সোনালি বর্ণের। আর সেই সাথে এর প্রাপ্যতা। সোনা যেমন খানিকটা কষ্ট করে মিলে ঠিক তেমনই এই মধু সংগ্রহ করতেও রয়ে যায় জীবনের ঝুঁকি। সুন্দরবনের খলিসা ফুলের মধু অধিক আকর্ষনীয় ও জনপ্রিয় হলেও এর প্রাপ্যতা খানিকটা কম। কারণ কোন বিশেষ ফুলের মধুর জন্য চাই অধিক পরিমাণে সেই মধুর নেক্টার যা খলিসা ফুলের বেলায় খানিকটা দূরূহ। কেননা পুরো বন জুড়ে এই গাছ বিচ্ছিন্নভাবে বেড়ে উঠে। ফলে চাইলেও এই মধু অধিক পরিমাণে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। সেজন্যই হোয়াইট গোল্ড তথা চিংড়ির মতন রূপক অর্থে এর নামকরণ করা হয়েছে সুন্দরবনের লিকুইড গোল্ড হিসেবে।
গোল্ড হানি (Gold honey) এর বৈশিষ্ট্য ও বিশেষত্ব
সুন্দরবনের এই লিকুইড গোল্ড হানি ঘনত্বের দিক দিয়ে অন্যান্য মধু অপেক্ষা খানিকটা পাতলা হয় এবং এতে এক ধরণের বুনো ঘ্রাণ থাকে। এর উপর পোলেনের পুরু স্তর পড়তে দেখা যায় এবং একে স্ফটিকায়িত হতেও দেখা যায় না। অন্যান্য মধু অপেক্ষা এই মধুর পরিপক্কতাও বেশি থাকে।
গোল্ড হানি (Gold honey) কি আসলেও খলিসা ফুলের মধু?
সুন্দরবনের আনাচে কানাচে নানান ধরনের ফুলের সমাহারের দেখা মিলে। এসব ফুলের নেক্টার থেকেই মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। তাই সুন্দরবনের মধুতে গরান, কেওড়া, খলিসা, হরগোজা, পশুর, বাইন ইত্যাদি নানা ধরনের ফুলের নেক্টারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু যখন কোন মধুকে আলাদা ভাবে নির্দিষ্ট করে কোন ফুলের পরিচয়ে পরিচিতি দেওয়া হয় তখন সেই মধুতে সেই নির্দিষ্ট ফুলের নেক্টারের পরিমাণ ৮০ শতাংশ বা তার বেশি হওয়া আবশ্যক। আর মৌমাছি যেই ফুল হতে নেক্টার সংগ্রহ করে সেই ফুলের পোলেন এর অস্তিত্ব সেই মধুতে দেখা যায়। সেন্ট্রিফিউজ মেশিনে কিছু পরিমাণ মধু দিয়ে ঘুরিয়ে মাইক্রোস্কোপে দেখলে সেখানেও পোলেনের উপস্থিতি চোখে পরে। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে একজন মানুষ যেমন অন্য আরেকজন অপেক্ষা ভিন্নতর ঠিক তেমনই প্রতিটি ফুলের পোলেন অন্য কোন ফুলের পোলেন অপেক্ষা আকৃতিতে ভিন্ন। আর সেজন্যেই সেট্রিফিউজ পদ্ধতির মাধ্যমে সহজেই কোন মধু আদতে কোন ফুলের নেক্টার হতে সংগৃহীত তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।
তাছাড়া ফুলের মৌসুমের উপর ভিত্তি করেও বিভিন্ন মধুকে আলাদা করা যায়। এই যেমন খলিশা ফুলের মধু সংগ্রহ করা হয় প্রতি বছর মে মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সময়কালে। কারণ এই সময়টাতেই খলিশা ফুল ফোঁটে। আর ওই সময়ে যে মধু সংগ্রহ করা হয় সেটাতে খলিশা ফুলের নেক্টার থাকে সবচেয়ে বেশি। স্বভাবতই মৌমাছিরা কাছাকাছি যে ফুল পায় সেটা থেকেই নেকটার সংগ্রহ করে। তাই মৌসুম হিসেব করে মধু সংগ্রহের ফলে বিশেষ বিশেষ মধুকে আলাদা করা সম্ভব। আর এভাবেই গোল্ড হানি যে আদতেই খলিসা ফুলের মধু তা সহজেই নিশ্চিত করা যায়।
প্রাকৃতিক মধু ও গোল্ড হানির তফাৎ
প্রাকৃতিক মধু ও গোল্ড হানি উভয়ই মৌমাছির প্রাকৃতিক চাক কেটে সংগ্রহ করা হয়। তবে মূল পার্থক্যের জায়গা হচ্ছে মধুতে বিদ্যমান ফুলের নেক্টার, মধুর স্বাদ, বর্ণ ও গন্ধে। সাধারণত সুন্দরবনের প্রাকৃতিক মধুতে থাকে ১২ থেকে ১৩ ধরনের নেক্টার এবং তার মধ্যে খলিসা ফুলের নেক্টার থাকে ২০ থেক ২৫ শতাংশ। কিন্তু গোল্ডেন হানিতে শুধুমাত্র খলিসা ফুলের নেক্টারই থাকে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ। ফলে এই মধুর স্বাদ, ঘ্রাণ ও বর্ণেও চলে আসে পার্থক্য।
মেয়াদকাল
সাধারণত অপরিশোধিত মধু ভালোভাবে সংরক্ষণ করলে অনেকদিন ভালো থাকে। তবে BSTI এর নিয়ম অনুসারে খাস ফুডের গোল্ড হানির মেয়াদ ২ বছর পর্যন্ত দেওয়া হয়ে থাকে।
প্রকৃতির এই বিরল প্রজাতির ফুলের মধু স্বাদ ও ঘ্রাণেও আলাদা। আর তাইতো এর এতো জনপ্রিয়তা। কিন্তু এই জনপ্রিয়তার ফায়দা লুটতেই যেনো সোচ্চার এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। তাইতো অন্যান্য ফুলের নেক্টার মিশ্রিত মধু বা চিনি ও অন্যান্য রাসায়নিক মিশ্রিত মধুকে খলিসা ফুলের মধু বলে চালিয়ে দিয়ে প্রতারিত করে যাচ্ছে গ্রাহকদের। ফলে টাকা দিয়ে শেষমেশ ভেজালের মধ্যে নিমজ্জিত হতে হচ্ছে গ্রাহকদের। তাই এই বিশেষ মধু ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা মেনে চলা আবশ্যক। তবেই পাওয়া যাবে খলিসা ফুলের মধুর আসল স্বাদ। আর খাস ফুড প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই গ্রাহকদের সরবরাহ করে আসছে খাঁটি মধু। তাই এবারও আস্থা থাকুক আপনার বিশ্বস্ত খাস লিকুইড গোল্ড হানিতেই।