কেক রেসিপি নিয়ে আলোচনা শুরুর পূর্বে চলুন দারুণ একটি দৃশ্যকল্পের মুখোমুখি হই আমরা –
অফিসে কাজ করতে করতে আজ দিদার সাহেব চিন্তিত ও অন্যমনস্ক। একমাত্র মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার ফল দেওয়ার কথা আজ। মেয়ে তাঁর ছাত্রী হিসেবে বেশ ভালো। বিরাট কোন বিপর্যয় না ঘটলে অনায়াসেই গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ চলে আসার কথা। কিন্তু মা-বাবা হবার যা যন্ত্রণা আরকি, সমানে টেনশান হচ্ছে।
বারবার দিদার সাহেবের মনে পড়ছে পাঁচবছর আগের কথা। মতিন সাহেবের ছেলেটাও অনেক ব্রিলিয়ান্ট ছিল। প্রায়ই দিদার সাহেবরা শুনতেন মতিন সাহেবের ছেলে রকিবের ক্লাসে ফার্স্ট হবার কথা। সেই রকিবের মত ছেলে পাঁচবছর আগে কোন এক অজ্ঞাত কারণে জিপিএ ফাইভ পেলো না এইচএসসি পরীক্ষায়। ছেলে ভালো, নিয়মিত লেখাপড়া করে, কোন বদনাম নেই – তাও কেন তাঁর ফলাফলের এই বিপর্যয় হল কেউই বের করতে পারেনি সেটা। সে বিপর্যয় থেকে মতিন সাহেবের ছেলে রকিব আর বের হতে পারেনি। পছন্দের জায়গায় পড়তে না পারার হতাশায় পরে লেখাপড়াই ছেড়ে দিল। এখন বেকার বসে থাকে বাসায়। দিদার সাহেবের মেয়ে তন্বীরও যদি এমন কিছু হয়? মেয়ের খারাপ রেজাল্ট হলে মেয়ে যদি হতাশ হয়ে এরকম হাল ছেড়ে দেয়?
না, না। এরকম অলুক্ষুণে কথা চিন্তা করবেন না – ভাবলেন দিদার সাহেব। কাজে মনযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলেন তিনি। আশেপাশের কলিগদের সাথে একটু খোশগল্প করে মনকে ডাইভার্ট করার চেষ্টা করলেন। নাহ, হচ্ছে না। বিশাল যন্ত্রণায় পড়া গেল দেখি!
হঠাৎ করে ডেস্কে রাখা মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। দিদার সাহেবের মনটা ছ্যাঁত করে উঠলো। ঐ ত, তন্বীর মায়ের নাম স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে! ও আবার এখন কেন ফোন দিলো? মেয়ের রেজাল্ট দিয়েছে তারমানে? এত ক্যাড়ম্যাড় করে ফোনটা বাজছে কেন? ফোনের আওয়াজ এত বেশী কেন মনে হচ্ছে? খারাপ সংবাদ না তো? খারাপ সংবাদ হলে ফোন বেশী জোরে বাজে নাকি?
সকল অলুক্ষুণে চিন্তাভাবনা দূরে সরিয়ে রেখে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলেন দিদার সাহেব।
মিনিটখানেক পরেই দিদার সাহেবের পাশের ডেস্কে বসা কলিগ জামান সাহেব দিদার সাহেবের মুখে দেখতে পেলেন এগাল ওগাল চওড়া হাসি।
– কি দিদার সাহেব? এত খুশি যে?
– ভাইজান আলহামদুলিল্লাহ, আপনাদের সবার দোয়ায় মেয়েটা গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়েছে!
– মাশা আল্লাহ মাশা আল্লাহ! তারমানে এখন তো মিষ্টিমুখের সময়! কই দিদার সাহেব আমাদের মিষ্টিমুখ করান একটু!
এই রে সেরেছে – মনে মনে ভাবলেন দিদার সাহেব। জীবনে কখনো ভেজাল মিষ্টি খাননি, আপনজনকেও খাওয়াননি। মেয়ের এত বড় সাফল্যে অফিসের প্রিয় কলিগদের যেন তেনভাবে মিষ্টিমুখ করাতে যথারীতি দিদার সাহেবের মন সায় দিল না। তিনি বললেন,
– অবশ্যই অবশ্যই জামান সাহেব! তা আর বলতে! কালকেই আপনাদের সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবো ইন শা আল্লাহ!
বলেই আবার ফোনে চলে গেল তাঁর হাত, স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বললেন মিষ্টি আর কেক বানানোর জন্য, মেয়ে যেন বাসায় এসেই একটা সারপ্রাইজ পায়, সাথে সেই কেক নিয়ে এসে তিনি যেন কালকে সব কলিগদের খাওয়াতে পারেন!
কথা বলা শেষ করে ফোন নামিয়েই দিদার সাহেবের স্ত্রী আয়েশার মাথায় চিন্তার ভাঁজ দেখা গেল। বেশ বড় কেকই বানাতে হবে, যেহেতু বাসার সব মানুষজন এবং স্বামীর কলিগরা খাবে। কি হবে এখন? উনি তো কেক বানাতেই জানেন না ভালো করে! চিন্তা করতে করতে হঠাত মনে পড়লো রহিমা ভাবীর কথা। রহিমা ভাবী হল মেয়ে তন্বীর এক বান্ধবীর মা – মহিলা রান্নায় বেশ পারদর্শী, কেক রেসিপি জানেন। কালক্ষেপণ না করে রহিমা ভাবীকে ফোন দিয়ে কেক রেসিপি বা কেক বানানোর নিয়ম ভালো করে জেনে নিলেন আয়েশা। পুরো বিকেলটা খেটে কেক বানিয়ে যেই টেবিলে রেখেছেন, তখনি বাসায় দিদার সাহেব আর মেয়ে দুইজনই চলে আসলো কিছু সময়ের ব্যবধানে। আবেগে আপ্লুত মেয়ে কেক খেয়ে হতভম্ব হল বেশ! এত ভালো কেক মা কবে বানাতে শিখলো?
দিদার সাহেবও পরদিন বেশ আয়োজন করে কলিগদের জন্য কেক নিয়ে গেলেন, সবাই আনন্দের সাথে মিষ্টিমুখ করল। কিন্তু কিভাবে সম্ভব হল আয়েশা বেগমের পক্ষে বাড়িতেই এই কেক বানানো? জেনে নেওয়া যাক কেক রেসিপি টা!
দিদার সাহেব আর আয়েশা বেগমের মত এরকম অনেকেই রয়েছেন, যারা বাইরে থেকে কেনার ঝামেলা ছাড়াই বাসায় কেক বানিয়ে নিতে পারেন, নিচের রেসিপিটা অনুসরণ করেই –
কেক রেসিপি
কেক তৈরির জন্য যারা ওভেনের ওপর নির্ভরশীল কিংবা যাদের ধারণা শুধুমাত্র ওভেনেই কেক তৈরি করা যায়, তাদের জন্য আজকের রেসিপি। কারণ এই কেক তৈরিতে ওভেনের দরকার পড়বে না মোটেই। আপনার নিত্যদিনের ব্যবহৃত গ্যাসের চুলায়ই তৈরি করতে পারবেন কেক। আর তা খুব সহজেই। চলুন জেনে নেই-
উপকরণ :
-
মাখন বা তেল ১/২ কাপ
- চিনি ১/২ কাপ
- ডিম ২টি
- ময়দা বা ব্রাউন আটা ১ কাপ
- বেকিং পাউডার ১ চা চামচ
- গুড়ো দুধ ২ টেবিল চামচ
- ভ্যানিলা এসেন্স ১ চা চামচ
- কিসমিস
- মোরব্বা ও বাদাম
প্রণালি :
ময়দার সাথে বেকিং পাউডার মিশিয়ে চেলে নিন। ডিম ভেঙ্গে কুসুম আলাদা করে রাখুন, এবার ডিমের সাদা অংশ বিটার দিয়ে ফোম তৈরি করুন। কুসুম, তেল/মাখন ও চিনি দিয়ে আরও ভালোভাবে বিট করুন। ভ্যানিলা এসেন্স ও গুড়ো দুধ দিয়ে বিট করে ভালো করে মিশিয়ে দিন এবার চালা ময়দা মিশিয়ে দিন ডিম ময়দার মিশ্রণে। এক্ষেত্রে কখনোই বিটার ব্যবহার করবেন না। মনে রাখুন ময়দা দেওয়ার পরে যে দিকেই নাড়ুন না কেন এক দিকেই নাড়বেন, নাহলে ফোমটা বসে যাবে এবং কেক ফুলবে না। এবার পছন্দমতো কিসমিস, বাদাম ইত্যাদির গায়ে অল্প ময়দা/কর্নফ্লাওয়ার লাগিয়ে কেকর মিশ্রণে মিশিয়ে দিন এবং বেকিং প্যানে অথবা চুলার দেয়ার জন্য সুবিধামতো একটি পাত্রে ঢেলে নিন (পাত্রের ভিতরে মাখন মেখে নিবেন আগেই)।
বেক করার পদ্ধতি :
চুলায় একটি সসপ্যান বা হাড়ি নিন। স্টিলের স্ট্যান্ড থাকলে স্টিলের/লোহার স্ট্যান্ড প্যান এর উপর বসিয়ে দিন আর না থাকলে বালি দেড় থেকে ২ ইঞ্চি পুরু করে প্যানের ভিতরে দিন। মাঝারি আঁচে পাত্রটি গরম করুন। এবার কেকের বাটি স্ট্যান্ড অথবা বালির ওপর বসিয়ে অল্প আঁচে সসপ্যান বা হাড়ি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। ১ ঘণ্টা পর টুথপিক দিয়ে কেক হয়েছে কিনা দেখুন। না হলে আরও ১৫/২০ মিনিট বেক করুন।
কোথায় পাবেন কেক তৈরির সমস্ত উপকরণ?
এই তো জেনে গেলেন কেক রেসিপি। কিন্তু এ সমস্ত উপকরণ পাবেন কোথায়? বাইরে যাবেন খুঁজে খুঁজে কিনতে? তাহলে আর ঘরে বসে পুদিং বানানোর মজা থাকলো কই? পুডিং টাও তো বাইরে থেকে কিনে আনা যায়! আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- বাজারে যে সমস্ত খাদ্য উপকরণ পাওয়া যায় তা কি ভেজালমুক্ত কি না, তাই বা শিওর হবেন কি করে? শুধু মজাদার খাবার খেলে চলবে না, সেটা স্বাস্থ্যকর হতে হবে। তাই আপনাদের জন্য অনলাইন ফুড শপ- খাসফুড হতে পারে দারুণ সমাধান। khaasfood.com থেকে অর্ডার করুণ কেক বানানোর সব উপকরণঃ ব্রাউন আটা, গুড়ো দুধ, চিনি, ডিম, তেল, বাদাম ইত্যাদি।
সাশ্রয়ী মূল্যে বাজারের সেরা ১০০% নিরাপদ খাবার সরবরাহ করার জন্য ইতিমধ্যেই খাসফুডের সুনাম ছড়িয়েছে সর্বত্র। অনলাইনে অর্ডার করে ঘরে বসে পন্য ডেলিভারি নিন, কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই। ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন। আগামীতে নতুন কোন মজাদার খাবারের রেসিপি নিয়ে হাজির হয়ে যাব।
আরও পড়ুনঃ
মাথাব্যথা ও ঘুম না হওয়ার সমস্যা দূর করতে দুধ ও মধুর মিশ্রণ
ঘরে বসে ওভেন ছাড়াই ঝটপট পুডিং বানানোর নিয়ম